১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি

নয়াবার্তা প্রতিবেদক :  নতুন অর্থবছরের শুরুতেই ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির খবর এলো। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। ওই গড় অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি হয় ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এবার বাজেট আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মূল্যস্ফীতি। সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের আলোচনায় ঘুরেফিরে এসেছে প্রসঙ্গটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই জানিয়ে একে বাজেটের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছে গবেষণা সংস্থাগুলো। এমনকি বাজেটের কিছু পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কাও করছেন অর্থনীতিবদরা। এমন আলোচনা-সমালোচনা শেষ হতে না হতেই এলো ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির খবর।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ওয়েবসাইটে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে তা সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকে বেশি। ওই অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ছিল সরকারের। অবশ্য বাজেট ঘোষণার সময় তা ছিল আরও কম, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি
বিবিএসের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে বেশি। অর্থবছরটিতে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের দুই অর্থবছর খাদ্যপণ্যের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল।
অবশ্য একক মাসের হিসাবে গত জুনে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে। মাসটিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এপ্রিল ও মে মাসে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৭৪ এবং ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের জুনে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি
গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শহরের চেয়ে গ্রামের মূল্যস্ফীতি বেশি। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত জুনে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা শহরে ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তার আগে মে এবং এপ্রিলে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৯ ও ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই দুই মাসে শহরের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ ও ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে গত বছর থেকে মূল্যস্ফীতির হিসাব পদ্বতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন ২০২১-২২ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হচ্ছে। পণ্য এবং সেবার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা মূল্যসূচকে ৭৪৯ ধরনের ৩৮৩ আইটেমের পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ৪২২টি পণ্যের বাজার দর হিসাব করা হতো। নতুন হিসাবের আওতায় এসেছে মদ, সিগারেট, বেভারেজ ও মাদকদ্রব্য, সন্তানের শিক্ষার খরচ, পরিবারের ইন্টারনেটের খরচ, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে খাবারের খরচসহ আরও বেশ কয়েকটি খাত। নতুন পণ্য এবং সেবার সঙ্গে যোগাযোগ খাতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেইলের ব্যবহারে ইন্টারনেটের ব্যবহার যুক্ত হয়েছে।

বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বাবদ মানুষের খরচের হিসাবের ভিত্তিতে প্রতি মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) তৈরি করা হয়। এ সূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কত বাড়ল, তার শতকরা হারই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি। এর ১২ মাসের গড় হিসাব করে তৈরি হয় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুঁই থেকে অ্যারোপ্লেন পর্যন্ত সব পণ্যের দর গড় করে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ যে ধরনের পণ্য বেশি কেনে, সেসব পণ্যের মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশের ওপরে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে এসেছে। গত দুই বছরে মূল্যস্তর অনেক ওপরে উঠে গেছে।

গত কয়েক অর্থবছর ধরেই মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই অর্থবছরও মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

Share