২০৯ মামলায় অজ্ঞাত আসামির ‘ফাঁদে’ নগরবাসী

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীতে দায়ের হওয়া মামলায় আসামির তালিকায় সুনির্দিষ্টভাবে নাম আছে প্রায় দেড় হাজার জনের। সেইসঙ্গে ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামির সংখ্যা কমপক্ষে ২ লাখ ৮৪ হাজার। এসব মামলায় সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্য পালনে বাধা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতামূলক তৎপরতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পরে বিভিন্ন মামলার আসামি দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের রিমান্ডে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এভাবে বিপুলসংখ্যক ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামি রেখে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে দেখছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, সহিংসতার ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ৫০টি থানায় ২৬৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি থানার ২০৯টি মামলার এজাহার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর ৫৯টিতে আসামির তালিকায় ১ হাজার ৫৫৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫০টিতে কারও নাম না দিয়ে ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি মামলায় আসামির সংখ্যা উল্লেখ নেই। বাকি ৯৫টি মামলায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করাকে একটা ফাঁদ হিসেবে ধরা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে সন্দেহভাজন হিসেবে যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞাতনামা মামলার ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অভিযান চালানো হয়। এক্ষেত্রে অনেক নির্দোষ ব্যক্তি বা আসামি ভোগান্তির শিকার হতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় হাজার হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি। এভাবে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার করা হচ্ছে। অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটলে তখনই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় বা ঘটনাস্থল থেকে কাউকে না পেলে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পেলেই আসামি গ্রেপ্তার করা হয়। এক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘একেকটি হামলায় শত শত লোক জড়িত থাকে। ওই ঘটনায় যখন এজাহার হয়, তখন পুলিশ বা সাধারণ কোনো মানুষ, যিনিই বাদী হন না কেন, তিনি হামলাকারী সবাইকে চেনেন না। প্রাথমিকভাবে যাদের চেনা যায় তাদের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয় এবং অচেনা ব্যক্তিদের অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেয় পুলিশ।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামি থাকলেই কাউকে তো হয়রানি করার সুযোগ নেই। যে কোনো ঘটনায় যে বা যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করেই আইনের আওতায় নেওয়া হয়ে থাকে। তা ছাড়া প্রতিটি মামলা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদারকি করে থাকেন, এতে অযথা হয়রানির সুযোগ থাকে না।’

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বিআরটিএ ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বনানী থানায় ১২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিতে আসামি হিসেবে ১৪৪ জনের নাম রয়েছে। অন্য ছয় মামলার এজাহারে কারও নাম না থাকলেও অজ্ঞাতনামা আসামি আড়াই হাজার।

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ হত্যাসহ নানা অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানা মামলা হয়েছে ২১টি। এর মধ্যে ছয়টি মামলায় ১৩৩ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। ১০টিতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করা হলেও সংখ্যা উল্লেখ নেই। বাকি মামলাগুলোতে অজ্ঞাত আসামি সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার। কদমতলী থানার চার মামলায় এজাহারনামীয় ৩০৪ জন এবং ১৩ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে। ডেমরা থানার দুই মামলার এজাহারে ২৮ জনের নাম রয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আসামি ‘বিপুলসংখ্যক’। মুগদা থানার দুই মামলার একটিতে একজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত ৩০০ জন। আরেক মামলায় আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।

বিটিভি ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রামপুরা থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এর একটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে ৪ হাজার। অন্য তিন মামলায় অজ্ঞাত আসামি ‘অসংখ্য’।

হাতিরঝিল থানার তিন মামলায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ নির্দিষ্ট আসামি ১৮৫ জন। সেইসঙ্গে অজ্ঞাতনামা আছে সাড়ে ৭ হাজার। বাড্ডা থানার ৯ মামলার মধ্যে একটিতে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪ হাজার। অন্য আটটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি ৬১ হাজার। ভাটারা থানার দুটি মামলার মধ্যে একটিতে ৬ হাজার অজ্ঞাতনামা এবং অন্যটিতে কোনো আসামি উল্লেখ করা হয়নি।

গুলশান থানার পাঁচ মামলার মধ্যে চারটিতে অজ্ঞাতনামা আসামি ১৯ হাজার। অন্যটিতে সংখ্যা উল্লেখ নেই। খিলগাঁও থানার আট মামলার মধ্যে একটিতে একজন এজাহারভুক্ত ও অন্যটিতে ১ হাজার ২০০ জনকে ‘অজ্ঞাত’ আসামি করা হয়েছে।

পল্টন মডেল থানায় ১৩টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিতে ১৭৭ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। চারটিতে আসামির সংখ্যা উল্লেখ নেই। বাকি মামলাগুলোতে ৭ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে।

মতিঝিল থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় আসামিরা অজ্ঞাতনামা। শাহজাহানপুর থানার এক মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সবুজবাগ থানার তিন মামলার মধ্যে একটি ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের সংখ্যা উল্লেখ নেই। তবে অন্য মামলায় ৮০০ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

তেজগাঁও থানার দুই মামলার মধ্যে একটিতে এজাহারভুক্ত ৩০ জন এবং ১ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা উল্লেখ নেই। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ছয়টি মামলার মধ্যে একটিতে এজাহারভুক্ত আসামি আটজন। অন্য পাঁচ মামলায় সাড়ে ১৪ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আদাবর থানায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার মধ্যে একটিতে ২৫ জনকে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। অন্যটিতে আসামিরা অজ্ঞাতনামা। তবে সংখ্যা উল্লেখ নেই। মোহাম্মদপুর থানায় ১০ মামলার মধ্যে ছয়টিতে এজাহারভুক্ত আসামি ১৮৯ জন। সেইসঙ্গে অজ্ঞাতনামা ৫ হাজার আসামি রয়েছে। বাকি চার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি ২ হাজার ৪০০।

কলাবাগান থানার এক মামলায় এজাহারনামীয় ছয়জন এবং অসংখ্য অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। নিউমার্কেট থানার আট মামলার মধ্যে একটিতে ২৬ জনের নাম আছে। চারটি মামলায় আসামিরা অজ্ঞাতনামা হলেও সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তবে অন্য মামলাগুলোতে সাড়ে ৩ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থানার এক মামলায় এজাহারভুক্ত ১২ জন এবং অজ্ঞাতনামা আড়াই হাজার আসামি করা হয়েছে।

সূত্রাপুর থানায় এক মামলায় অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩ হাজার এবং ওয়ারী থানার এক মামলায় অজ্ঞাত ৩০০ আসামি রয়েছে। কোতোয়ালি থানায় হওয়া এক মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা উল্লেখ নেই। গেন্ডারিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। বংশাল থানার দুই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি ‘অসংখ্য’। চকবাজার থানার দুই মামলায় কোনো আসামির উল্লেখ নেই। লালবাগ থানার আট মামলায় কোনো আসামির নাম নেই। দুটি মামলায় আসামির কোনো তথ্যই উল্লেখ নেই। তবে ছয়টি মামলায় অজ্ঞাতনামা সংখ্যা ২১ হাজার ৫০০।

মিরপুর মডেল থানার ১০টি মামলায় ২৪ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারনামীয় কোনো আসামি নেই। শেরেবাংলা নগর থানার দুই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ৩৮ এবং অজ্ঞাতনামা ৫০০। কাফরুল থানার ৬টি মামলার মধ্যে একটিতে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে ৭ হাজার। অন্য পাঁচ মামলায় ২০ হাজার ৫০০ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পল্লবী থানার ৩ মামলায় এজাহারভুক্ত ১১৮ জন এবং অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৮ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। রূপনগর থানার দুই মামলায় অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রমনা মডেল থানার পাঁচ মামলার মধ্যে চারটিতে এজাহারনামীয় কোনো আসামি নেই এবং অজ্ঞাত আসামির সংখ্যাও উল্লেখ নেই। তবে আরেকটি মামলায় ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

উত্তরা পশ্চিম থানায় ১১টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক মামলায় চারজনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। অন্য ১০টি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হলেও কোনো সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তুরাগ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হলেও কোনো সংখ্যা উল্লেখ নেই।

উত্তরা পূর্ব থানায় ৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় এজাহারনামীয় ৩৬ আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আড়াই হাজার উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা দেওয়া হয়নি। বাকি তিন মামলায় ৫ হাজার ৭০০ আসামি করা হয়েছে। বিমানবন্দর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটিতে অজ্ঞাত আসামি ২৫০ জন। আরেকটিতে আসামির সংখ্যা উল্লেখ নেই।

ধানমন্ডি থানার ছয়টি মামলার মধ্যে দুটিতে নাম দেওয়া হয়েছে ১৩ জনের। সেইসঙ্গে অজ্ঞাত আসামি পাঁচ হাজার। বাকি চার মামলায় আরও ৭ হাজার ৪০০ অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে। শাহবাগ থানার ১৪টি মামলার মধ্যে তিনটিতে ছয়জনের নাম দেওয়া হয়েছে। তিনটি মামলায় আড়াই হাজারের বেশি অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করা হয়। অন্যটিতে অজ্ঞাত আসামি ‘অসংখ্য’।

জানা গেছে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে পল্টন থানার মামলায় রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে কাফরুল থানার মেট্রোরেলে নাশকতায় মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফের তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এজাহারে নাম না থাকলেও সেতু ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামি হিসেবে বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ও নাসির উদ্দিন অসিমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে তাদের মেট্রোরেলে নাশকতার মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে বিভিন্ন মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিএনপি নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনুকে। এ ছাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে নাশকতার অভিযোগে কাফরুল থানার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিনুল হককে ফের অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির সহ আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে হলে আসামির প্রত্যক্ষ বা উসকানিমূলক কোনো প্রমাণ থাকতে হবে। তবে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বিরোধী দলের নেতাদের অজ্ঞাতনামা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। একটিতে রিমান্ড শেষে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে মূল অপরাধীদের না খুঁজে বিরোধী দলকে নির্মূল করার প্রক্রিয়া চলছে।’

গণঅধিকার পরিষদ নেতা নুরুল হক নুরের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাদী হয়ে যেসব মামলা করে, সেখানে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-পীড়নই এসব মামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।’

তবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যেই অনেক মামলায় অজ্ঞাত আসামির বিষয়টি উল্লেখ করা হয় জানিয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুল্লাহ আবু কালবেলাকে বলেন, ‘অনেক সময় ঘটনা ঘটার পর মামলা হলেও এজাহারনামীয় আসামি থাকে না। তখন তদন্তের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পায়, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়।’

Share