
বিশেষ প্রতিবেদক : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি’র জন্য ১ হাজার ১৪২ প্রকল্পের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ছিলো ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। গতকাল রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্ত করা হয়। এডিপির খসড়া জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এনইসি সভা শেষে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উন্নয়ন বাজেটে বরাবরের মতো এবারও বড় ৫ খাতেই ৭০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে শুধু পরিবহন ও যোগাযোগ খাতই ২৫ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে। তবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এডিপিতে মোট ২ লাখ ১৫ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। এর সাথে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা যোগ করা হলে মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ৫ সেক্টরের মধ্যে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, শিক্ষায় ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। স্বাস্থ্যে দেওয়া হবে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এসব খাতেই বরাদ্দ যাচ্ছে এডিপির ৬৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো; স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৬ হাজার ৯৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ ৩২ হাজার ৩২৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ২০ হাজার ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। আরও আছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা পাঁচ দশমিক ৫৪ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১১ হাজার ৬১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা পাঁচ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৩৯৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা পাঁচ দশমিক ২০ শতাংশ। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা বা চার দশমিক ২৮ শতাংশ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৪৮৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা তিন দশমিক ৫২ শতাংশ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পাচ্ছে ৭ হাজার ৭১৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা তিন দশমিক ৫২ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ১৪৩টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৯৬৯টি, সমীক্ষার ১৯টি, কারিগরি সহায়তার ৯৭টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প থাকবে ৫৮টি। এগুলোর বাইরে অনুমোদনহীন নতুন প্রকল্প থাকবে ৯৯০টি। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের ৭৫৪টি, বৈদেশিক ঋণ পাওয়া ২০০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের ৩৬টি প্রকল্প রয়েছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত প্রকল্প থাকবে ৭৯টি। এডিপিতে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ২২৮টি প্রকল্পের তালিকা যুক্ত করা হবে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট মূল এডিপির তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চাহিদা দিয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে সরকারের অর্থায়ন ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের অর্থায়ন কমে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে, আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে।