৫১ হাজার বছর আগের শিল্পকর্মের নিদর্শন উত্তর জার্মানিতে

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : মানুষ হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, প্রাণী জগতের মধ্যে থেকেও আমাদের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট আছে যা বাকিদের থেকে আমাদের আলাদা করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভাষার আদানপ্রদান। সংস্কৃতি এবং জ্ঞানের ধারা যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। প্রযুক্তি এবং তার ব্যবহার আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান বাতলে দিয়েছে। একসময়ে শুধুমাত্র প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করে যেভাবে মানুষ জীবন অতিবাহিত করত সেই সম্পর্কে আজ নতুন নতুন তথ্য আমরা পাচ্ছি প্রযুক্তির মাধ্যমে। আদিম মানব থেকে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেভাবে আজ উন্নত মানব জাতির রূপান্তর ঘটেছে তা আজ প্রায় সকলেরই জানা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ৫১ হাজার বছরের পুরানো খোদাই করা একটি দৈত্যকার হরিণের হাড় আবিষ্কার করেছেন, উত্তর জার্মানির হার্জ পর্বতমালায়। আদিম মানব ‘নিয়ান্ডারথাল’-রা এটি তৈরি করেছিল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

হরিণের হাড়ের উপরের খোদাইগুলি যথাযথ এবং তার শৈল্পিক নিদর্শন দেখার মত বলছেন আবিস্কর্তারা। নিয়ান্ডারথালদের প্রতীকী ও শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যের পূর্ববর্তী প্রমাণ এর আগে খুব কমই ছিল, তবে নতুন অনুসন্ধান থেকে নিয়ান্ডারথালদের আচরণ সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে আসছে। এর আগেই অবশ্য এই আদিম মানবদের ব্যবহার করা সরঞ্জাম, প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়েছিলেন গবেষকরা। প্রত্নতাত্ত্বিকবিদ ডার্ক লেডার, টমাস টেরবার্গার এবং তাদের সহকর্মীদের হরিণের হাড়ের কার্বন পরীক্ষা করে জানতে পারেন এটি ৫১,০০০ বছর পুরানো। মাইক্রোস্কোপিক বিশ্লেষণ এবং পরীক্ষামূলক অনুলিপি সূচিত করে যে খোদাই করার আগে হাড়টি নরম করে ফোটানো হয়েছিল। এখনও অবধি, নিয়ানডারথালদের শৈল্পিক মনোভাবের নিদর্শন মিলেছে, স্পেনের লা প্যাসিগা, মালট্রাভিওসো এবং আর্দালেসে গুহার দেওয়ালে। নতুন গবেষণা বলছে, এই দৈত্যাকার হরিণ সেই সময়ে আল্পস পর্বতে দেখা যেত। খোদাইকরণের প্রকৃতি দেখে বোঝা যায়, নিয়ান্ডারথাল- এই আদিম মানবের কল্পনা শক্তি বেশ দৃঢ় ছিল। এই ধরণের শিল্পকর্ম বেশ বিরল বলেই মনে করছেন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের লেখক সিলভিয়া বেল্লো। তিনি নেচার পত্রিকায় তাঁর বক্তব্যটি লিখেছেন, যা নিয়ান্ডারথালসের জটিল মনস্তত্বের দিক উন্মোচন করতে সহায়তা করেছে। খোদাইয়ের জন্য ব্যবহৃত দক্ষ কৌশলগুলি মুগ্ধ করেছে সিলভিয়া বেল্লো-কে। প্রত্নতাত্ত্বিকবিদ ডার্ক লেডার মনে করেন, নিয়ান্ডারথালরা কারুর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার পক্ষপাতী ছিল। তাদের শৈল্প কর্ম সেই দিকটাই তুলে ধরছে। তবে ৫০,০০০ বছর পূর্বে নিয়ান্ডারথাল এবং আধুনিক মানুষের মধ্যে জিনের আদান-প্রদানের প্রেক্ষিতে ইতিহাসবিদ সিলভিয়া বেল্লো মনে করেন নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে হোমো স্যাপিয়েন্সের কিছুটা প্রভাব হয়তো ছিল। লেখিকার মতে, জিনের মাধ্যমেই আধুনিক মানব ও নিয়ান্ডারথল জনগোষ্ঠীর মধ্যে জ্ঞানের আদানপ্রদান হয়েছিল। যা নতুন কিছু শেখার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তাই হয়তো মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলা হয় এই বিশ্বে।

Share