নিজস্ব প্রতিবেদক : রিজার্ভ এবং রেমিটেন্স দুটোতেই স্বস্তি ফিরেছে। চলতি মাসের ২০ দিনেই রেমিটেন্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার। বাকি ১০ দিনে আরো ৭০ থেকে ৭৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রেমিটেন্স আসে সাড়ে ৭০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এন্ড ট্রেজারী ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর মহাব্যবস্থাপক কাজী রফিকুল হাসান জানান, গত ৩ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২.০২ বিলিয়ন থেকে কমে ৩ হাজার ১০১ কোটি ডলারে নেমে এসেছিলো। এর পর পরই ৪০ মিলিয়ন ডলার স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করার পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়নেরও নীচে নেমে আসে। সেই রিজার্ভ গতকাল ৩১.০৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী বছরে মোট রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই অংক ২০১৭ সালের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলার বিলিয়ন ডলার। মূলত টাকার বিপরীতে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথমভাগে প্রবাসী আয়ের গতি নিম্নমুখী থাকলেও মাস শেষে রেমিটেন্স এসেছে ১২০ কোটি ২৮ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স আয় ৩ শতাংশ কমেছিলো। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে । যা গত বছর একই সময় ছিল ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের ২০ দিনেই রেমিটেন্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৭৪৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার পাঠিয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশে ৬৯৩ কোটি ২৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এই হিসাবে ৬ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই রেমিট্যান্স ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত অর্থবছর ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও রেমিট্যান্স ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি, কারণ তার আগের বছর রেমিট্যান্স অনেক কম এসেছিল। বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ১২ হাজার ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে।
গত মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে চলতিবছর ৫২৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে। ২০১৭ সালের তুলনায় যা ১০ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। বিশ্বের প্রধান ৬টি অঞ্চলেই রেমিট্যান্স বেড়েছে। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় বেড়েছে প্রায় ২০ ভাগ। দক্ষিণ এশিয়ায় ১৪ ভাগ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অভিবাসন এবং রেমিট্যান্সে অগ্রগতি ও পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশে অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের প্রভাবে সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় সাড়ে ১৩ ভাগ রেমিট্যান্স বাড়ার পূর্বাভাস দিলেও উপসাগরীয় অঞ্চলে নিয়োগ কমে যাওয়ায় ২০১৯ সাল নাগাদ বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর সর্বোচ্চ ৭৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করে শীর্ষে থাকবে ভারত। এর পরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে থাকবে চীন ৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, ফিলিপাইন ৩৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, মেক্সিকো ৩৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, মিশর ২৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, নাইজেরিয়া ২৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তান ২০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, ইউক্রেন ১৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ আহরণ করবে ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের পর বিশ্বে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ১ কোটি ৯৯ লাখে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়েছে। এদিকে ভেনেজুয়েলাসহ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর সংখ্যাও বেড়েছে।
- Home
- এক্সক্লুসিভ
- ৬ মাস ২০ দিনে রেমিটেন্স এসেছে সাড়ে ৭০০ কোটি ডলার, রিজার্ভ আবার ৩১ বিলিয়ন