নিজস্ব খুলনা জেলা প্রতিনিধি : সুন্দরবনের দুবলার চরের (আলোরকোল) ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর থেকেই তা কার্যকর হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে পুণ্যস্নান বা রাশপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর রাশমেলা উপলক্ষে কয়েক হাজার মানুষ সুন্দরবনের দুবলার চরে যান। উৎসবে হিন্দু-মুসলমান থেকে শুরু করে সব সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেন। তবে এবার থেকে শুধু পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকেই সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
চলতি বছর রাসপূজা হবে আগামী ২৮–৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৮ নভেম্বর বাগেরহাটের মোংলা থেকে রাসপূজা উপলক্ষে যাত্রা শুরু করবেন আয়োজকেরা। ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পূজা আর ৩০ নভেম্বর প্রথম প্রহরে স্নান অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ফিরতে শুরু করবেন পুণ্যার্থীরা।
জানতে চাইলে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, যে স্থানে রাসমেলা হয়, সেটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। মেলা উপলক্ষে হাজারো মানুষ সেখানে যাওয়ায় একদিকে যেমন বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয়, অন্যদিকে ওই স্থানে মানুষের ফেলা দেওয়া আবর্জনায় ক্ষতি হয় বনের। এতে জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ে। এ কারণে বন, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে চলতি বছর থেকে দুবলার চরে রাস উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু লোকজন সেখানে শুধু পূজা ও স্নান করতে যান। এ কারণে ওই সময় শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাই সেখানে যাওয়ার অনুমতি পাবেন। অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের সেখানে গিয়ে বনের পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। বনে মানুষের সমাগম যত কম হবে, বন তত বেশি ভালো থাকবে।
বন বিভাগের ওই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় সুন্দরবন দুবলার চর (আলোরকোল) রাস উদযাপন জাতীয় কমিটি। ওই কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু শন্তু বলেন, এ দেশ সব সম্প্রদায়ের মানুষের দেশ। রাসমেলা উপলক্ষে সেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষই সমবেত হন। এতে পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। প্রতিবছর মেলায় যাওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকেন। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাস আর উৎসবে পরিণত হবে না।
গত বছর রাসমেলা হওয়ার কথা ছিল ১০–১২ নভেম্বর। তবে ১০ নভেম্বর উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানার কারণে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ। এ কারণে মেলা আর হয়নি। তবে মেলা উদযাপন কমিটির সদস্যরা সেখানে গিয়ে পূজা ও স্নান করেন। এ বছর কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের কারণে ১৯ মার্চ থেকে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ।
১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলে দেওয়া হবে। তবে ওই সময় সব সম্প্রদায়ের পর্যটকই ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন।