নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজধানীতে বাস পোড়ানোর ঘটনা সরকারি এজেন্টদের নাশকতা। সরকারের একটা অংশ আছে যারা বিভিন্নভাবে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে। যারা সরকারের এজেন্টস স্যাবোটাস নামে পরিচিত। বিএনপির চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই তারা এ কাজ করেছে। এর আগেও এভাবে বিএনপিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু বিএনপি এ রাজনীতি করে না। এই ধরনের ঘটনার তীব্র ভাষায় নিন্দা করছি। এই দুষ্কৃতিকারীরা যারাই হোক শাস্তি হওয়া দরকার।
শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব বলেন।
বিএনপিকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়েরের ঘটনা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এর নিন্দা করছি। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা সবসময় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করি। এগুলো কখন হয়- যখন দেশে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস থাকে না। আপনি একটা মিছিল করতে পারবেন না, কোথাও গিয়ে সভা করতে পারবেন না- এসব অনেকদিন ধরে হয়ে আসছে। যার ফলে অনেক সময় এই ধরনের যারা দুষ্কৃতিকারী তারা এই সুযোগগুলো নিয়ে এসব ঘটায়।’
তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুই বছর জেলে ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। এরকম একটা কঠিন সময়ে দলের ঐক্য অটুট আছে। এখনো দলের মধ্যে কোনো ভাগ হয়নি। আমাদের দল চলে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে। প্রতি শনিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এই বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিই। এই কঠিন সময়ে বিএনপি যে ভূমিকা পালন করছে তা যথেষ্ট সঠিক।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির এখন একমাত্র লক্ষ্য দলনিরপেক্ষ সরকার। এটাই তাদের একমাত্র রাজনৈতিক এজেন্ডা। দেশে প্রকৃত জনগণের সরকার গঠন করার জন্যে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন তৈরি করে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এটা না হলে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, মানবাধিকার কোনটার সমাধান হবে না।’
খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া মানসিকভাবে সক্রিয় আছেন। তিনি সবসময়ে আমাদের হৃদয়ে আছেন। তিনি রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রভাব নিয়ে আছেন। খালেদা জিয়া কখনো চলে যাননি এবং যাবেন না। দেশের মানুষের অত্যন্ত গভীরে তার অস্তিত্ব রয়েছে। তার সুস্থতার জন্য এখনো গ্রামের অনেকে রোজা রাখেন। তাই তিনি রাজনীতিতে আছেন এবং থাকবেন, অবশ্যই সক্রিয় হবেন। গুলশানে নিজের বাসায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল আছে। তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য অন্তরায়। আসলে প্রধান অন্তরায় তো তারা। ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছিলেন তারা। ১৯৭২ সালে তারা যে সংবিধান তৈরি করেছিলেন সেই সংবিধান তারা পরিবর্তন করে মানুষের সমস্ত অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছেন। এটাই বাস্তবতা। এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টসহ একেকটা আইন তৈরি করেছে- সেগুলোর একটাও গণতন্ত্রের পক্ষের আইন না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বললেন- এই কমিশন এতো ভালো যে, তাদের কাছ থেকে আমেরিকার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এরকম হাস্যকর কথা একজন সিইসির কাছ থেকে আসতে পারে এটা কল্পনাও করতে পারি না। এর থেকে বোঝা যায়, আমাদের গণতন্ত্রের অবস্থা কোথায়, নির্বাচনের ব্যবস্থা কোথায়, রাষ্ট্র কিভাবে চলছে।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিবকে রিপোর্টার্স ইউনিটির ক্রেস্ট উপহার দেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।