নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : জাল কাবিননামা ও ভুয়া চিকিৎসা সনদ দিয়ে আদালতে মিথ্যা যৌতুক মামলা করার অভিযোগে এক নারীকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম শামসুন্নাহার (৩০)।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭–এর বিচারক কামরুন্নাহার এই আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ময়মনসিংহের আবদুল হান্নান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৯ মে শামসুন্নাহার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭–এ নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন। পরে সিএমএম আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেট ওই নারীসহ তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তাঁদের জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে আদালত আবদুল হান্নানের বিরুদ্ধে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন জমা দেন। পরে প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত আসামি হান্নানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের পরোয়ানা পাওয়ার পর আসামি হান্নানকে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক মাস কারাগারে থাকার পর গত বছরের ৭ জানুয়ারি আসামি হান্নান জামিনে মুক্ত হন।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭–এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আফরোজা ফারহানা আহমেদ বলেন, এই মামলায় আজ অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। মামলার বাদী শামসুন্নাহার আদালতে হাজির হয়ে বলেন, তিনি মামলার আসামি আবদুল হান্নানকে চেনেন না। হান্নান তাঁর স্বামীও নন। অন্যের প্ররোচনায় এই মিথ্যা মামলা করেছিলেন। আদালতের কাছে এই জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালত আসামি হান্নানকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।
একই সঙ্গে হান্নানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শামসুন্নাহারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পরে মিথ্যা মামলা করার দায়ে শামসুন্নাহারকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আসামি আবদুল হান্নান দাবি করেন, তিনি ময়মনসিংহে বসবাস করেন, সেখানে তাঁর ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা আছে। যে নারী তাঁকে স্বামী দাবি করে মিথ্যা যৌতুকের মামলা করেছিলেন, তাঁকে তিনি কোনোভাবেই চেনেন না। অথচ তাঁর মামলায় তিনি এক মাস জেলও খাটলেন।
মামলার কাগজপত্রের তথ্যে দেখা গেছে, শামসুন্নাহার একটি নিকাহনামা আদালতে জমা দেন। এই ভুয়া কাবিননামায় লেখা আছে, হান্নানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ২০১৬ সালের ১০ জুন। দেনমোহরের পরিমাণ এক লাখ টাকা। এ ছাড়া আদালতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সনদ জমা দেওয়া হয়। এখানে রোগী হিসেবে ওই নারীর নাম রয়েছে। তিনি ভর্তি হন ২০১৯ সালের ১৯ মে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান পরদিন ২০ মে।
শামসুন্নাহার দাবি করেন, তাঁর এলাকার আলমগীর নামের একজনের প্ররোচনায় তিনি এই মামলা করেন। বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র এক হাজার টাকা। ওই নারীর আগের আইনজীবী মুনমুন নাহার চৌধুরী বলেন, আলমগীর নামের এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলেছিলেন, তাঁর বোনকে (শামসুন্নাহার) যৌতুকের জন্য স্বামী মারধর করেছেন। তখন আলমগীর নিকাহনামা, চিকিৎসা সনদসহ ওই নারীকে হাজির করেন। পরে ওই নারী হান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই নারী ও আলমগীরের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তিনি মামলা ছেড়ে দেন।
অবশ্য আইনজীবী মুনমুন নাহার চৌধুরী জানান, আলমগীর নামের সেই ব্যক্তি মারা গেছেন।
অবশ্য হান্নান দাবি করেন, তাঁর কোনো শত্রু নেই। কেন তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা হলো, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
শামসুন্নাহার জানালেন, তাঁর বিয়ে হয়েছে ২০১৪ সালে। তিনি বাড্ডা এলাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। তাঁর স্বামী একজন রাজমিস্ত্রি। আদালতে দেখা যায়, ওই নারীর কোলে ছিল দেড় বছরের শিশুসন্তান। আদালতে তাঁর পক্ষে আজ কোনো আইনজীবীও ছিলেন না।
আদালতের আদেশে দেখা যায়, অন্যের প্ররোচনায় শামসুন্নাহার হান্নানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছিলেন। তিনি অনুতপ্ত। মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া হান্নান বলেন, মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে তাঁর দিন কাটছিল। যে নারী তাঁর নামে মামলা করেছিলেন, তাঁকে সম্প্রতি খুঁজে বের করেন। আজ ওই নারী আদালতে হাজির হয়ে সত্য কথা বলেছেন। তিনি মিথ্যা মামলার হাত থেকে রেহাই পেলেন।
যে বা যারা ভুয়া কাবিননামা ও জাল চিকিৎসা সনদ তৈরি করলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে পিপি আফরোজা ফারহানা আহমেদ বলেন, যাঁরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মিথ্যা মামলা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী হান্নান চাইলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।