খালেদাকে বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পরিবারের আবেদন সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। বুধবার রাতে শামীম ইসকান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসভবনে গিয়ে আবেদনপত্রটি দিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।

আবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, একটা আবেদন পেয়েছি। বিদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হবে। আবেদনটি পরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ডায়াবেটিসসহ কিছু জটিল রোগ ও করোনা আক্রান্ত বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে প্রতিদিন। তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।তার অক্সিজেন লেভেল ওঠানামা করছে। বেগম জিয়া বুধবার সকাল থেকে কিছুটা শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন।এই অবস্থায় তাকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারেও তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করেছে মঙ্গলবার। তারা বলেন, করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন, সেরে ওঠার পরও তারা কমবেশি সবাই কিছু জটিলতায় ভুগেছেন। খালেদা জিয়ারও সেটিই হয়েছে।তার বয়স ৭৬ বছরের ওপরে।বিদেশে চিকিৎসা খুবই জরুরী।

বুধবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন।তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

এই সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বুধবার রাত সাড়ে শামীম ইসকান্দার তার পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসভবনে গিয়ে লিখিত আবেদনপত্রটি দিয়ে আসেন।

মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সরকার দেশে থেকে চিকিৎসা নেয়ার শর্তটি শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোন বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার বলেছেন,খালেদা জিয়ার অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন। তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়া সরকারের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব : এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনবিদ এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়া সরকারের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। এখানে আদালতের কোনো ভূমিকা নেই, এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক আদেশ।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাজা যে স্থগিত করা হয়েছে সেটাও সম্পূর্ণ প্রশাসনিক আদেশ। সেখানে আদালতের কোনো ভূমিকা নেই।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমি আশা করব এ অবস্থায় অযথা সময় ক্ষেপণ করে তার জীবনের ঝুঁকি না বাড়িয়ে, সরকার অবিলম্বে সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যেতে দেওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই।

বুধবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এ দাবি জানান।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধি ৪০১(১) ধারা মোতাবেক সরকার যে কোনো আসামীর সাজা মৌকুফ বা সাজা স্থগিত করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়াকে যখন মুক্তি দেয়া হয় তখন শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। কিন্তু এখন এ অবস্থায় সরকারের মানবিক দায়িত্ব, নৈতিক দায়িত্ব দেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া উচিৎ। এখানে কোনো দরখাস্ত ছাড়াই সরকার অনুমিত দিতে পারে।

এর আগে মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার উপধারা-২ অনুযায়ী সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। এখন এটা (বিদেশ নিতে) করতে গেলে আদালতে আসতে হবে। আমার তো তাই মনে হয়। তারপরও আমি না দেখে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তিনি বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা কতটুকু প্রয়োজন। তা বাংলাদেশে আছে কি-না, সবকিছু দেখে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

উল্লেখ্য,করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১১ এপ্রিল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া। ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে তখনও তার করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল রাতে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চেস্টের সিটিস্ক্যান ও কয়েকটি পরীক্ষার পর সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তাকে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয়। পরে আরও দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানে ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।

Share