আসছে করোনার ক্যাপসুল-ট্যাবলেট

নয়াবার্তা ডেস্ক প্রতিবেদন : করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় টিকা আবিষ্কারের পর খুব তাড়াতাড়ি বাজারে আসতে চলেছে এর ওষুধ। কয়েক মাস অপেক্ষার পর বাজারে পাওয়া যাবে এই ওষুধ। ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসকরা যে ধরনের ওষুধ খেতে দেন, সে রকমই করোনার জন্যও ওষুধ পাওয়া যেতে পারে বলে দাবি করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের একাংশ।

করোনা চিকিৎসার ওষুধের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মেরেক এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের মোলনুপিরাভির। এমনটাই দাবি করছেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ-এর একটি বিভাগের ডিরেক্টর কার্ল ডাইফেনবাক। ওই ওষুধ নিয়ে ইতিমধ্যেই গবেষণা চলছে। টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা ফাইজারও এই রকম একটি ওষুধ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। নজরে রয়েছে রসে এবং অ্যাটিয়া ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি ট্যাবলেটও।

ওই বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, পরীক্ষার স্তর পেরোলে এবং ছাড়পত্র মিললেই বাজারে চলে আসবে এই ওষুধ। শরীরে কোভিড ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ধরনের ওষুধ খাওয়া শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। এতে উপসর্গ বড় আকার নিতে পারে না। উত্তর ক্যারোলাইনা চ্যাপেল হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট টিমোথি সিয়াহান বলেন, ‘‘শুধু নিজেকে সুস্থ করে তোলাই নয়, অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছ়ড়িয়ে পড়া রুখতেও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে এই ওষুধ।’’

রেমডেসিভিরের প্রাক-ক্লিনিক্যাল গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সিয়াহান। তিনি জানান, ইঁদুরের শরীরে মোলনুপিরাভির প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, সার্স-কোভ-২ প্রজাতি রুখে দিচ্ছে ওই ওষুধ। পরে ওই পদ্ধতিতেই ট্যাবলেট তৈরি করা শুরু করেছে মেরেক ও রিজব্যাক। ২০২ জন ব্যক্তির উপর ওই ওষুধ প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই কমে যাচ্ছে ওই ওষুধ প্রয়োগের পর।

সেপ্টেম্বরের শুরুতেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ পর্যায়ের গবেষণা শুরু করেছে ফাইজার। দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট শীঘ্রই হাতে আসবে বলে জানিয়েছে ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাটিয়াও।

পিল খেয়ে করোনামুক্তি হতে পারে :

গত জুনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদিনের মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৪৪ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক মিরান্দা কেলিস। ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল তার। পেশায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী হয়েও তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।

এরমধ্যে তার স্বামী জো-ও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনিও গুরুতর অসুস্থ। দুজনেই খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে তাদের ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। এ নিয়ে জো বলেন, ‘আমি ঠিক করলাম খুব তাড়াতাড়ি ভেন্টিলেটরে যাব না। আমাদের পাঁচটি বাচ্চা আছে। পরে তাদের কে বড় করবে?’

পরে সিয়াটলে বসবাসকারী এ দম্পতি চলে যান নিকটবর্তী ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারে। সেখানে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যোগ দেন তারা। যা কি-না কভিডকে একটি অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার আওতায় আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা। যদিও এ দম্পতি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কী ওষুধ দেওয়া হয়েছে, তবে এটা বলছেন, ট্রায়াল হিসেবে তাদের দৈনিক খাবার বড়ি বা পিল দেওয়া হয়েছিল।

এবিসি নিউজ বলছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার পরের দিন এ দম্পতি দিনে দুইবার করে চারটি পিল নেন, যদিও তাদের বলা হয়নি, তারা একটি সক্রিয় ওষুধ নিচ্ছেন। পরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে তারা অনেক ভালো হয়ে গেছেন বলে জানাচ্ছেন। তারা বলছিল, লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। একপর্যায়ে এই পিলেই দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা সুস্থ হয়ে উঠেন।

এ প্রসঙ্গে কেলিস বলেন, ‘আমরা জানি না চিকিৎসা পেয়েছি কি-না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা ভালো একটা কিছু পেয়েছি। এই ‘অন্তর্নিহিত’ অবস্থার জন্য আমরা খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছি বলে মনে করছি।’

এবিসির প্রতিবেদন বলছে, কভিড প্রতিরোধ করতে বিশ্বের পরবর্তী সুযোগ কী হতে পারে, তা আবিষ্কারে কেলিসদের ভূমিকা রয়েছে। তারা ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন বলেই কভিডকে অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার আওতায় আনার কথা চিন্তা করা যাচ্ছে। দৈনিক ওষুধের একটি স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতি দিয়ে কভিড প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে কি-না, তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস শনাক্ত; এ অবস্থায় দৈনিক ওষুধটি এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছে, এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে এই দম্পতিকে ট্রায়ালে। তবে এখানেই শেষ নয়।

নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট টিমোথি শেহান বলেন, ‘ওরাল অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলো কেবল একজনের কভিড সিনড্রোমের বিরুদ্ধে কাজ করে না, বরং একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের বাকিদের সংক্রমণ সীমিত করার ক্ষেত্রেও এই ওষুধের সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘হেপাটাইটিস-সি, এইচআইভিসহ অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণের জন্যও অ্যান্টিভাইরালগুলো ইতোমধ্যেই অপরিহার্য চিকিৎসা। তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত একটি ‘টামিফ্লু’; যেটি পিল বা দৈনিক ওষুধ হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রেসক্রাইভ করা হয়। যা ইনফ্লুয়েঞ্জার সময়সীমা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া এটি যদি সময়মতো দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে।’

এবিসির প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে ভাইরাল সংক্রমণের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য তৈরি এই ওষুধগুলো প্রকারভেদে ভিন্নভাবে কাজ করে। কিন্তু এগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রকৌশলী হতে পারে। এগুলো রেসপেক্টরগুলোকে ব্লক করে দিতে পারে। আর তা যদি করতে পারে, তাহলে সুস্থ কোষে ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে পারে। এছাড়া এগুলো শরীরে সক্রিয় ভাইরাসের পরিমাণও কমিয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের এইডস বিভাগের পরিচালক কার্ল ডাইফেনবাখ বলেন, ‘কভিডের জন্য অন্তত তিনটি প্রতিশ্রুতিশীল অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। যার ফল শরতের শেষ দিকে বা শীতের মধ্যেই আশা করা যায়। তিনি দেশটিতে অ্যান্টিভাইরাল ডেভেলপমেন্টের তত্ত্বাবধান করছেন বলেও জানা গেছে।’

তিনি এও বলেন, ‘সিয়াটলে ট্রায়ালে করোনা আক্রান্ত কেলিসকে মেরেক অ্যান্ড কোং এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্সের একটি ওষুধ, যাকে বলা হয়, ‘মোলনুপিরভির’; সেটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও পিল আছে, যেগুলোর একটি নিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফাইজার।

এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, সবকিছু ঠিক থাকলে এবার হয়তো বাজারে আসবে কভিড পিল। মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো চেষ্টা করছে, এবার করোনা প্রতিরোধকারী ওষুধ বাজারে আনতে। যদি সেটা হয়, তাহলে সাধারণ ভাইরাল জ্বরে যেমন ওষুধ কিনে খাওয়া যায়, তেমনি করোনার ওষুধও বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে। সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন মার্কিন গবেষকরা। শুরু হয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও।

মার্কিন সংস্থা মেরেক ‘মোলনুপিরভির’ অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নিয়ে কাজ করছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্স। দুই কোম্পানি এক হয়েই এই ওষুধ তৈরি করেছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চলছে। আশা করা হচ্ছে, অক্টোবরের মধ্যেই ট্রায়ালের চূড়ান্ত ফল জানা যাবে।

Share