নয়াবার্তা প্রতিবেদক : দেশে করোনার সংক্রমণের কমে এলেও বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। একইসঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়াও। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, ফুসফুসের এক ধরনের ইনফেকশনের নাম নিউমোনিয়া। এটি সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহের জন্য হয়ে থাকে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন। এই প্রদাহ যখন জীবাণুঘটিত বা সংক্রমণজনিত কারণে হয়, তখন তাকে নিউমোনিয়া বলে। নিউমোনিয়া হতে পারে যেকোনো বয়সেই, তবে শিশুদের বেশি হয়। রোগটিতে প্রথমে সর্দি-কাশির মতো সাধারণ উপসর্গ থাকে, যা পরে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী ৮ লাখেরও বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়, অর্থাৎ প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে মৃত্যু হয় একটি শিশুর। দুই বছরের কম বয়সী যত শিশু মারা গেছে, তাদের বেশিরভাগই জীবনের প্রথম মাসেই মৃত্যুবরণ করেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে কথা হয় রোগীর স্বজন বিপ্লব মল্লিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চার বয়স এক বছর। দুই দিন ধরে আমার বাচ্চার সর্দি-কাশি ও জ্বর। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে আসার পর চিকিৎসক জানান, নিউমোনিয়া হয়েছে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ঠাণ্ডার কারণে রোগী বাড়ছে। গত কয়েকদিন শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে এই সময় শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, অ্যাজমা, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকে সাধারণ সর্দি-কাঁশি, ঠাণ্ডা-জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত দুই দিন ঢাকা শিশু হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ বেসরকারি কিছু হাসপাতাল ঘুরে সেখানে ঠাণ্ডার কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের নিচতলার ২ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকতেই দেখা গেলো, এক চিকিৎসক ও এক নার্স আট মাস বয়সী শিশু ফারহানাকে নিয়ে ব্যস্ত। তাকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। কুমিল্লা থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে আসা মা ফারহানা বলেন, ‘শীতের শুরুতেই গ্রামে দিনে গরম, রাতে ঠাণ্ডা পড়ছে। এর মধ্যে হঠাৎ বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে এক আত্বীয়ের সহযোগিতায় এখানে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
ফারহানার চিকিৎসা বিষয়ে চিকিৎসক জানান, ফারহানার নিউমোনিয়া হয়েছে। এছাড়া কাশতে কাশতে বুকে কফ জমে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। ওষুধের পাশাপাশি দিনে তিন বার করে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। চিকিৎসা চলছে।
শিশুদের জন্য নিউমোনিয়া একটি আতঙ্কের নাম। প্রতিবছর এ দেশে অনেক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে অনেকে মারাও যায়। বিশেষ করে যেসব শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে, তাদের মধ্যে এই মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। তবে একটু সতর্ক হলেই এই বিপজ্জনক অসুখ থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখা যায় কিংবা তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচানো যায়।
যেসব কেন্দ্রে চুয়েট, কুয়েট, রুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা যেসব কেন্দ্রে চুয়েট, কুয়েট, রুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা
শিশুদের নিউমোনিয়া বিষয়ে করণীয় সর্ম্পকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুদের নিউমোনিয়া থেকে নিরাপদ রাখতে মায়েদের একটু বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শীতকালে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই শীতকালে মায়েদের নিজ নিজ বাচ্চার দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। সহজে যেন তারা ঠাণ্ডায় আক্রান্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগের মাত্রা বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ঠাণ্ডা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্তদের থেকে শিশুকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। সঠিক নিয়মে প্রয়োজনমতো হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। ময়লা হাতের মাধ্যমেও নিউমোনিয়ার জীবাণু ছড়ায়।’ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার চেয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা উত্তম বলেও তিনি মন্তব্য করেন।