নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বিচারক সংকটে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে চার জন বিচারপতি রয়েছেন। এরমধ্যে ছুটিতে রয়েছেন একজন বিচারক। এখন বিচারকাজ পরিচালনা করছেন তিন জন বিচারক। বিচারাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুতই দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া উচিত। অধিকসংখ্যক বিচারক থাকলে আপিল বিভাগে মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তিতে একাধিক বেঞ্চ গঠন করে দেওয়ার সুযোগ থাকে প্রধান বিচারপতির হাতে। যাতে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ানো সম্ভব হয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ১৫ ডিসেম্বর তাকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সেদিন আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা ছিল পাঁচ জন। তবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলীর পরিবর্তে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপরই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে যান বিচারপতি ইমান আলী। আর ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সম্প্রতি অবসরে যাওয়ায় আপিল বিভাগের কর্মরত বিচারকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে তিন জনে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতি কতৃর্ক নিয়োগের মাধ্যমে অচিরেই আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তখন আপিল বিভাগে একাধিক বেঞ্চে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য বেঞ্চ গঠন করে দিতে পারবেন প্রধান বিচারপতি। কবে নিয়োগ পাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আশা করছি চলতি মাসেই হয়ত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন রাষ্ট্রপতি।
সংবিধানের ৯৪(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।” ৯৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ রাষ্ট্রপতি কতৃর্ক নিযুক্ত হইবেন।” ৯৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, কোন বিচারক [সাতষট্টি] বত্সর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।” অথার্ত্ ৬৭ বছর পূর্ণ হলেই সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি অবসরে যান।
প্রসঙ্গত: ১৯৭২ সালে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা ছিল তিন জন। পর্যায়ক্রমে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৯ সালে গিয়ে দাড়ায় ১১ জনে। পরে এই সংখ্যা কমে গিয়ে ২০২০ সালে দাড়ায় ৯ জনে। গত এক বছরে আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি অবসরে গিয়েছেন। এই অবসরজনিত কারনে বিচারক সংখ্যা কমে গিয়ে চারজনে দাড়িয়েছে। বিচারক সংকট প্রকট হওয়ায় এখন আপিল বিভাগের এক নম্বর বেঞ্চে বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের পূর্বেও আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু করোনা সংক্রমণের পর আপিল বিভাগের বিচার কাজ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০১৭ সালের পূর্বেও আপিল বিভাগের তিনটি বেঞ্চে বিচার কাজ চলেছে।
সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান হতে দেখা যায়, ২০২০ সালে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৫ হাজার ৩৫০টি মামলা। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৫ হাজার ২২৫টি। ৪৯ বছর পূর্বে ১৯৭২ সালে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিলো ৪০৫৬ টি। ওই বছর নিষ্পত্তি হয় ১১টি মামলা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, আপিল বিভাগের বিচারক সংকট দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। মামলা জট কমানোর এটাই অন্যতম পন্থা। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি বার ও বেঞ্চে ছিলেন। বার ও বেঞ্চের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিচারাঙ্গনের সমস্যা চিহ্নিত করে অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্যতার সঙ্গে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারবেন।