ঠিকাদারের কাছ থেকে পদ্মা সেতু বুঝে পেল কর্তৃপক্ষ

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু চালুর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতুটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে গতকাল বুধবার মূল সেতুর কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম মাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেতু বুঝে নেওয়ার চিঠি গ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতিসহ যাবতীয় বিষয় দেখার জন্য এদিন প্রকল্প এলাকায় যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেতু বুঝে নেওয়া না হলে উদ্বোধন করা যায় না। এখন সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেছে। এরপর প্রকল্পের পরিচালক সেতু কর্তৃপক্ষকে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দেবেন। কারণ, উদ্বোধনের পর টোল আদায়, রক্ষণাবেক্ষণসহ পুরো দায়িত্ব চলে যাবে সেতু কর্তৃপক্ষের হাতে।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার তাঁদের সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে। তাঁরা এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। প্রথমে চুক্তি ছিল, তারা চার বছরে সেতু নির্মাণ করবে।

পাইলিং জটিলতা, নদীভাঙন, করোনা মহামারিসহ নানা কারণে পরে সময় বাড়ানো হয়েছে। ৩০ জুন বাড়তি সময় শেষ হচ্ছে। এখন কাজ শেষ করাটাকে প্রকৌশলের ভাষায় বলা হয়, সাবস্টেনশিয়ালি কমপ্লিটেড। কারণ, কাজ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরও এক বছর সম্পর্ক থাকবে। এটাকে বলা হচ্ছে লাইয়াবিলিটি পিরিয়ড। এ সময় সেতুর কোনো কাজ করার দরকার হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা করে দেবে। মেরামতের প্রয়োজন হলেও তাদেরই করতে হবে। আর ঠিকাদারের কোনো টাকাপয়সা পাওনা থাকলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ তা এই সময়ের মধ্যে পরিশোধ করবে।

দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের তদারকে যুক্ত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজ (বুধবার) একটা খুশির দিন। বলা যায়, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। একটা চ্যালেঞ্জিং কিন্তু একাধারে আনন্দের সময় পার করলাম। এই দীর্ঘ যাত্রায় অনেক স্মৃতি, অভিজ্ঞতা জমা হয়েছে। যা সারা জীবন মনে রাখার মতো।’

পদ্মা সেতুর টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) এবং চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানিকে।

আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের ৬৯৩ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেইসি মূল সেতুর নির্মাণকাজের তদারকি পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। অর্থাৎ সেতুর নির্মাণকারী ও তদারককারী দুটি প্রতিষ্ঠানই রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে। ফলে নতুন করে লোকবল জোগাড় করা কিংবা যন্ত্রপাতি আনার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।

২৫ জুন সকালে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি মাওয়ায় সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন। এ জন্য প্যান্ডেল তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী টোল দিয়ে সেতুতে প্রবেশ করে উদ্বোধনী ফলক উম্মোচন করবেন। গাড়িতে সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে আরেকটি ফলক উম্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি বিকেলে মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় ভাষণ দেবেন।

Share