নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : আসামি না হলেও তিন বছর কারাদণ্ডের ঘটনায় জাহালমের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল শুনানির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দুদকের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ দুদকের করা ওই আবেদনের ওপর শুনানি করে এই আদেশ দেন। সুপ্রিমকোর্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে হাইকোর্টে রুলের শুনানির ওপর চেম্বার আদালতের জারি করা স্থগিতাদেশ আর কার্যকর থাকছে না।
এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অন্য পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ায় নিরপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালম সংক্রান্ত মামলার রুল শুনানিসহ সকল কার্যক্রম স্থগিত করে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয় চেম্বার কোর্ট। ২৬ মামলায় জাহালমকে আসামি করার পেছনে কারা দায়ী তা জানতে চেয়ে দুদককে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ। একইসঙ্গে দুদকের করা ৩৩ মামলার নথিও দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় গত ২১ এপ্রিল জাহালম সংক্রান্ত মামলার রুল শুনানির সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক। তবে সোমবার দুদকের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় জাহালম সংক্রান্ত মামলার রুল শুনানিতে আর কোন বাধা থাকলো না।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরের ডুমুরিয়া গ্রামের ভুল আসামি হয়ে ৩ বছর কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক নিরীহ জাহালম সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে হাইকোর্টের মুক্তির নির্দেশের পরপরই গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মুক্তি পেয়ে নিজ গ্রামে ফিরেছেন। ভুল আসামি হয়ে ২৬ মামলায় প্রায় ৩ বছর কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক নিরীহ জাহালমকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা সব মামলা থেকে নিরীহ জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। ওইদিন তিনি আদালত বলেন, ‘এক নির্দোষ লোককে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না।’ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে আদালত এই ভুল তদন্তের সঙ্গে কারা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেকের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২৬টিতে জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসিবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দেয় দুদক। চিঠি পাওয়ার পর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে পাঁচ বছর আগে জাহালম বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। কিন্তু নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কথা সেদিন দুদকের কেউ বিশ্বাস করেনি। ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের এসব মামলায় জাহালম গ্রেফতার হন। তিনি জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন।
গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনটি ওইদিন এ হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করে। একই সঙ্গে নিরীহ জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইনসচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি স্বশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরই প্রেক্ষিতে ওইদিন সংশ্লিষ্টরা আদালতে হাজির হন।