নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নকিপুর খাদ্য গুদামের মেয়াদ উত্তীর্ন ভেজাল চাল পরীক্ষা করে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ১৪ দিনের ভেতর আদালতে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসন এবং কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারী করে ১৪ দিনের ভেতর নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আদালতে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। মামলাটিতে খাদ্য সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, মহা পরিচালক খাদ্য অধিদপ্তর, মহা পরিচালক নিরাপদ খাদ্যসহ ১৭ জন কে বিবাদী করা হয়েছে।
মেয়াদ উত্তির্ন ভেজাল চাল গুদামজাত রাখার খবর দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সাতনদী ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বিশ্ব কথার সংবাদ সংযুক্ত করে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নয়াবার্তা পত্রিকার সম্পাদক আবু বকর বাদী হয়ে হাইকোটে ৪৮৬৬/১৯ নং রিট মামলা দায়ের করেন।বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডঃ সামসুল হক কাঞ্চন।
এর আগে সাতক্ষীরার আদালতে দায়ের হওয়া দূর্নীতির মামলার বিবরণে জানা যায় নকিপুর খাদ্য গুদামে আমন মৌসুমী ৮০০ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহ করা হয়। এই আমন সংগ্রহ কাজে স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত মিলাদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহ না করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কুষ্টিয়ার খাদ্যগুদামের পুরাতন চাউল ইস্যুকৃত ডি ও ক্রয় করে নকিপুর খাদ্য গুদামজাত করা হয়। অপরদিকে চলতি মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে সাধারণ কোটায় ২৬০ মেট্রিক টন ও বিশেষ কোটায় ১০১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওইচাল গুলো উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে ডি ও ইস্যু করা হয়। ইস্যুকৃত ডি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওসি নকিপুর খাদ্য গুদাম ১৮ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে ৩৮ টাকা কেজি দরে সরকারের কাছে বিক্রয় দেখিয়ে পুনরায় গুদামজাত করে রাখেন। এই চাউল বিতরনের মাস্টাররোল জালিয়াতি করা হয় এ ধরনের কোন প্রকল্পে কোন লেবার কে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চাউল দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া গুদাম থেকে প্রকল্পের সভাপতির কাছে চাল হস্তন্তরের কাগজে জাল সই করে বিতরন দেখানো হয়। এ সমস্ত অভিযোগ স্থানীয় দৈনিক সাতনদী তে প্রকাশিত হয় গত ৩১শে মার্চ। তাছাড়া বাদী মহাপরিচালক খাদ্য অধিদপ্তর লিখিত অভিযোগ করেন এবং দুদকের হটলাইন ১০৬ অভিযোগ করেন। এছাড়াও শ্যামনগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন কিন্তু কোনভাবেই কোন ব্যবস্থা না হলে পাল্টা খাদ্য গুদাম ওই পুরাতন চাল গুলো নতুন বস্তায় ভরে পুনরায় গুদামজাত রাখেন। বাদী তার মামলায় আরো বলেন চলতি মৌসুমে ত্রাণের চাল হিসেবে গরীব অসহায়দের মাঝে এই পুরাতন খারাপ চাউল বিতরণ করা হবে। এগুলো খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় এলাকার লোকজন এই চাল খেয়ে অসুস্থ হতে পারে তাই জনস্বার্থে বাদি এই মামলাটি দায়ের করেছেন। বাদী তার মামলায় শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, খাদ্য গুদামের দুইজন নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৬ জনকে স্বাক্ষী করেছেন। বাদীর দায়েরকৃত মামলা আমলে নিয়ে আদালত দুদককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোটের এ্যাডঃ শেখ ত্বোহা কামাল।ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মামলার বাদী হুমায়ুন কবির বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন তাই তিনি তার একজন সৈনিক হিসাবে দূর্নীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান নিয়েছেন। তাছাড়া পচা চাল খেয়ে এলাকার মানুষ মহামারিতে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি আর ও বলেন নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর বিধান মতে মেয়াদ উত্তির্ন চাল গুদাম জাত রাখায় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খাদ্য আদালতে মামলা করে এলাকাবাসীকে রক্ষা করা দরকার। এতবড় দূর্নীতির পরেও খাদ্য প্রশাসন এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আজও কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া দূর্নীতির স্বাক্ষী হওয়ার খেসরত হিসাবে দুজন নিরাপত্তা প্রহরীকে দূরবর্তী জেলায় বদলী করায় দূর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাবেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।