অর্পিতার পর পার্থর আরও এক বান্ধবীর খোঁজ দিল ইডি

কলকাতা প্রতিনিধি : বিপুল অর্থসহ গ্রেপ্তার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের পর পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আরও এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর কথা জানাল দেশটির আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার নাম মোনালিসা দাস। পেশায় তিনি অধ্যাপক। শিল্পমন্ত্রী হওয়ার আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন থেকে মোনালিসার সঙ্গে সম্পর্ক বলে মনে করছে ইডি।

এদিকে আদালতের হাজতে থাকাকালীন বুকে ব্যথাসহ অনুভব করায় গ্রেপ্তার পার্থ চট্টোপধ্যায়কে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর আগে শনিবার দুপুরে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত তার দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারও আগে, সকালে সরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, বর্তমান শিল্প, পরিষদীয় ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে ইডি।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে টানা ২৭ ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে জিজ্ঞাসা করেন ইডির কর্মকর্তারা। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ইডি জানিয়েছে, তদন্তে মন্ত্রী ‘সহযোগিতা’ করছিলেন না।

শিক্ষক নিয়োগ মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের ১৪ জায়গায় একযোগে অভিযান চালায় ইডি। এ সময় পার্থর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক নথি উদ্ধারের কথা জানায় ইডি। এরপর তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান ইডির কর্মকর্তারা। তার বাসা থেকে ২১ কোটি ২০ লাখের বেশি নগদ অর্থ, ৭৯ লাখ রুপির স্বর্ণের গয়না এবং ৫৪ লাখ রুপির সমপরিমাণ বিদেশি অর্থ উদ্ধার হয়। এ সময় ২০টির বেশি মোবাইল ফোন এবং উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় বলে ইডির কর্মকর্তারা জানান।

ইডি আরও জানায়, মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই চলে আসার পরিকল্পনা ছিল ইডি কর্মকর্তাদের। কিন্তু মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার বাড়িতে বিপুল অর্থ উদ্ধারের পর তাকে গ্রেপ্তার না করে উপায় ছিল না। কারণ অর্পিতা জিজ্ঞাসাবাদে পরিষ্কার জানান, ওই অর্থ পার্থই তাকে রাখতে দিয়েছেন। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে নামে-বেনামে মন্ত্রীর একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় ইডি।

অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বিপুল অর্থ উদ্ধারের পর মন্ত্রীকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে শুধু অর্পিতাই নয়, মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আরও একাধিক বান্ধবীর কোটি কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পায় ইডি। এর মধ্যে মোনালিসা দাস নামে এক অধ্যাপক রয়েছেন, যার কয়েক কোটি রুপি দামের শান্তিনিকেতনে ১০টি প্লট ও বাংলোর সন্ধান পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানায় ইডি।

ইডির দাবি, এই সব সম্পদের মালিক আসলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই মোনালিসাকে ফ্ল্যাটগুলো দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে সত্যতা যাচাইয়ে মোনালিসাকেও জিজ্ঞাসাবাদের কথা ভাবছে তদন্তকারী এই সংস্থা।

তবে মোনালিসার দাবি, ‘উনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, আমি শিক্ষিকা। এই প্রয়োজনে যোগাযোগ, কথাবার্তা হতেই পারে। এর বাইরে তার সঙ্গে শ্রদ্ধার সম্পর্ক।’

অন্যদিকে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলায় তার প্রয়াত স্ত্রীর নামে ৪৫ কোটি রুপির স্কুল, শান্তিনিকেতনে সাতটি বাংলো, বোলপুরে চার হাজার স্কয়ার ফিটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ইডি।

এই ঘটনায় মন্ত্রীর বিধায়ক পদ খারিজ ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কারণ ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় মাত্র এক কোটি ১৬ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব দিয়েছিলেন এই মন্ত্রী।

শনিবার দুপুরে শিক্ষক নিয়োগ বা এসএসসি দুর্নীতি মামলার প্রধান আসামি হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দু’দিনের ইডি রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত। দুপুরে আদালতে তাকে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন ইডি কর্মকর্তারা। আদালতে মন্ত্রীর পক্ষে ২০ থেকে ২২ জন আইনজীবী লড়েন। তারা মন্ত্রীর জামিনের আবেদন করেন এবং একইসঙ্গে তিনি অসুস্থ দাবি করে তাকে হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানান। যদিও বিচারক আসামিপক্ষের সব আবেদন খারিজ করে দেন।

মন্ত্রীর প্রধান আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় পরে সংবাদমাধ্যমকে জানান, দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সোমবার তাকে আবার আদালতে হাজির করা হবে। তার আগ পর্যন্ত তাকে কারাগারে থাকতে হবে।

ইডির একটি সূত্র দাবি করেছে, গ্রেপ্তারের পর ভেঙে পড়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বারবারই তিনি বলছেন, সমস্ত শেষ! তার মানসম্মান (রেপুটেশন) নষ্ট হয়ে গেল।

এদিকে তার গ্রেপ্তারে অস্বস্তিতে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের ভেতরে অনেকেই চান মহাসচিব পদত্যাগ করুন। এই পরিস্থিতিতে জোকার ইএসআই হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকরা পার্থকে প্রশ্ন করেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা? ওই প্রশ্নের জবাবে পার্থ বলেন, ‘যোগাযোগ করেছিলাম। ফোনে পাইনি।’

দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ব্যাপারে বলেন, ‘দলের সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

দলের মুখপাত্রের এই মন্তব্যের পর অনেকে ধারণা করছেন, মহাসচিবের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে তৃণমূলের। এছাড়া তার গ্রেপ্তারের পর মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

Share