নয়াবার্তা প্রতিবেদক : ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে পড়া মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাড়িতে থাকা যাত্রীদের কাছে হাত পেতে টাকা চাইছিলেন তারা মিয়া নামের এক ব্যক্তি। এমন সময় সেখানে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল। অভিযানে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যরা তারা মিয়াকে আটক করে পুনর্বাসনে পাঠাতে গাড়িতে তোলেন।
কিন্তু আটক হওয়ার পর পুনর্বাসনকেন্দ্রে যেতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না তারা মিয়া। তিনি ভিক্ষুক নন বলে কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন। তিনি হাত জোড় করে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধও করেন। একপর্যায়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তিনি এক হাজার টাকা দিতে চান।
আজ বুধবার দুপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর মোড় এলাকায়। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যৌথভাবে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছিলেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক তুহিন রেজা বলেন, তিনি (তারা মিয়া) একটি প্রাইভেট কারের দরজার গ্লাসে টোকা দিয়ে যাত্রীর কাছে টাকা চাইছিলেন। এমন সময় তাঁকে আটক করা হয়। ঘটনার ভিডিও চিত্র ও ছবি রয়েছে।
তবে তারা মিয়ার দাবি, তিনি ভিক্ষুক নন, তখন ভিক্ষাও করছিলেন না। তারা মিয়া বলেন, ‘আমি আদম ব্যবসা করি। বিদেশে যেতে গ্রাম থেকে মানুষ জোগাড় করি। পরে তাদের পাসপোর্ট, ভিসা করে দিয়ে কোরিয়া, চীন ও জাপানে পাঠাই। আমি রাস্তা পারাপার করছিলাম। তখন আমাকে আটক করেছে।’ তারা মিয়ার ডান হাত কবজি থেকে কাটা, বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী এলাকায়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি দূর করার লক্ষ্যে ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১–এর আওতায় অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে গুলশান এলাকায় ১৬ জনকে আটক করা হয়। তবে এক নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আটকের পর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়। এ সময় আটক হওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিজেকে ভিক্ষুক নন দাবি করে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছিলেন। আবার কেউ কেউ বলছিলেন, তাঁরা আর ভিক্ষা করবেন না। কেউবা গুলশান-বনানী এলাকায় ভিক্ষার জন্য যাবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছিলেন।
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাঁদের আশ্বস্ত করে বলছিলেন, তাঁদের আর কষ্ট করে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হবে না। পুনর্বাসনকেন্দ্রে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে থাকা–খাওয়া ও নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ শেখার ব্যবস্থা করা হবে। বাকি জীবনে আর কষ্ট করে ভিক্ষা করতে হবে না।
আটক হওয়া ব্যক্তিদের একজন বরিশালের জয়নাল আবেদীন। তাঁর দাবি, তিনি ভিক্ষুক নন। আটকের আগে ভিক্ষাও করছিলেন না। তিনি চরমোনাইয়ে যাবেন। কিন্তু পকেটে টাকা নেই। তাই মানুষের কাছে ভাড়ার জন্য হাত পাতছিলেন।
রেনু আরা নামের এক নারী বলেন, তিনি বাড়ি থেকে নাতনির জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে তাঁর কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন। মাঝেমধ্যে তিনি পান খাওয়ার ১০-২০ টাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতেন। তবে ভবিষ্যতে তিনি এমন কাজ আর করবেন না।
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ বলেন, আটক হওয়ার পর অনেকে ভবিষ্যতে আর ভিক্ষা করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ছাড়া পেয়েই আবার ভিক্ষা করতে শুরু করেন তাঁরা। তাই আটক ব্যক্তিদের নিজ নিজ এলাকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে সাময়িক পুনর্বাসন করে বিভিন্ন হাতের কাজ শেখানো হয়। অভিযানে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মিরপুর-১ নম্বরে অধিদপ্তরের পুনর্বাসনকেন্দ্রে নেওয়া হবে।
অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভিক্ষা করায় বিভিন্ন বয়সের ১৫ জন নারী ও পুরুষকে আটক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাঁদের সাময়িক হেফাজতে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।