জামিন পেলেন কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক

নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীতে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়া বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদার (৭০) জামিন পেয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মোসতাক আহমেদের আদালত তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।

আবু ছালেক রিকাবদার শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। গত শুক্রবার রাতে বিনা পরোয়ানায় নিজ বাড়ির সামনে থেকে আবু ছালেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতভর ও পরদিন শনিবার দিনভর থানা হাজতে রাখার পর বিকেলে আরও কয়েকজনের সঙ্গে কোমরে দড়ি বাঁধা ও হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় তাঁকে নরসিংদীর আদালতে পাঠায় পুলিশ। ওই দিন নিম্ন আদালতের বিচারক তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিবপুর থানার গত বছরের নভেম্বরের একটি বিস্ফোরক আইনের মামলায় শুক্রবার রাতে বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পরদিন বিকেলে নরসিংদীর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠান। এর পর থেকে ছয় দিন ধরে তিনি নরসিংদীর কারাগারে আছেন। আজ দুপুরে নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ মোসতাক আহমেদের আদালতে তাঁর নির্ধারিত জামিন শুনানি হয়। ওই সময় আবু ছালেককে আদালতে তোলা হয়নি। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান ও তৌহিদুজ্জামান খান, অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আদালতের পিপি ফজলুল হক।

বিবাদী পক্ষের আইনজীবী তৌহিদুজ্জামান খান জানান, আদালতে আজ আসামি আবু ছালেকের জামিন আবেদন শুনানির তারিখ নির্ধারিত ছিল। এই মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালতের বিচারক তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ সন্ধ্যায় তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।

নরসিংদীর কারাগার প্রাঙ্গণে তাঁর কোমরে দড়ি বাঁধা ও হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির। ঘটনার পর থেকেই দলমত–নির্বিশেষে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারাও নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান। তাঁরা বলছেন, এ ঘটনায় শিবপুরসহ পুরো জেলায় দলমত–নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মর্মাহত।

প্রতিক্রিয়া জানতে শিবপুরের স্থানীয় পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা হলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহসীন নাজির, শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ওরফে বুলু মাস্টার এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান খান বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কোমরে দড়ি বাঁধার ঘটনায় স্থানীয় সব বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ কষ্ট পেয়েছেন। তিনি এমন কোনো মামলার আসামি ছিলেন না, কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁকে আদালতে নিতে হবে। কোনোভাবেই বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহসীন নাজির বলেন, ‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার এই অপমানে খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমি এর নিন্দা জানাই।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ খান বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে যে কেউই গ্রেপ্তার হতেই পারেন, তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দিতেই হবে। কোমরে দড়ি বাঁধার দৃশ্যটি আমি ফেসবুকে দেখেছি, এটি খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয় হয়েছে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ওরফে বুলু মাস্টার বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে পাঠানোর ঘটনাটি নিন্দনীয়। পুলিশের এমনটা করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে পুলিশের আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার দরকার আছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার বলেন, ‘বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আগের দিন রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতভর ও পরদিন দিনভর থানাহাজতে রেখে বিকেলে কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁকে আদালতে পাঠানোর যে দৃশ্যটি আমরা দেখলাম, তাতে আরও বীর মুক্তিযোদ্ধার মতো আমিও কষ্ট পেয়েছি। তাঁর মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিতে হবে? তিনি কি পালিয়ে যাবেন? আমি মনে করি, পুলিশ এই বাড়াবাড়ি না করলেও পারত।’

জানতে চাইলে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার বলেন, ‘বিএনপি নেতা আবু ছালেক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়ওনি। আমি হাজতে গিয়ে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দুপুরে খেয়েছেন কি না? তখনো তিনি আমাকে জানাননি, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিষয়টি নিয়ে এখন রাজনীতি চলছে।’

Share