ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণে বেজে চলেছে একুশের গান। আর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে হাতে ফুল, কালো পোশাক, ব্যাজ ধারণ করে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছেন হাজারো মানুষ। খালি পায়ে একে একে তাঁরা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে চিত্র এটি।

ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আজ রাত ১২টা এক মিনিটে। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাত যত বাড়ছে, তত বাড়ছে মানুষের ভিড়।

ফুল হাতে বাবা, ভাই ও শিক্ষকের সঙ্গে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসান রশিদ। রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে আসা রাফসান প্রথম আলোকে বলে, ‘শহীদ মিনারে প্রথমবারের মতো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসলাম। অনেক ভালো লাগছে।’

রাফসানের বাবা মো. হারুন অর রশিদ পেশায় গাড়িচালক। তিনি এর আগেও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। তবে এবার প্রথম দুই ছেলে ও তাদের শিক্ষককে নিয়ে এসেছেন। হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বাংলা ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছিল। বাচ্চাদের তো এগুলো জানা দরকার। তাই নিয়ে এসেছি ওদের।’

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় প্রেসক্লাব কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে ফুল দিতে দেখা যায়।

আজ রাতে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনারের পবিত্রতা যেন নষ্ট না হয় সে জন্য কাজ করছেন স্কাউট সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহীদ মিনারে প্রবেশের আগে চারটি নিরাপত্তা তল্লাশি বসানো হয়েছে। শাহবাগ দিয়ে শহীদ মিনার এলাকায় যাওয়া যাচ্ছে না। এই এলাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে পলাশী হয়ে।

অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। প্রথমেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির প্রাণের মাতৃভাষা বাংলা উপেক্ষা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু এ দেশের বীর সন্তানেরা তাজা রক্ত দিয়ে শাসকগোষ্ঠীর এই অপচেষ্টাকে রুখে দেন।

১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকায় শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করেন ভাষার জন্য লড়াইরত এ দেশের ছাত্র-জনতা। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে সালাম, বরকত, রফিক, সফিউর, জব্বারসহ নাম না-জানা অনেক বীর সন্তানের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। এরপর ১৯৫৬ সালে এ দেশের মানুষের প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

Share