যশোরেশ্বরীর ঐতিহাসিক কালি মন্দিরটি জাতীয়করণ ও আন্তজার্তিক তীর্থ ক্ষেত্র ঘোষণার দাবি

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী যশোরেশ্বরী কালি মন্দিরটি জাতীয় করণ ও আন্তজার্তিক তীর্থ ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি আবেদনে এই দাবির পাশাপাশি মন্দিরের সম্পত্তি লা-ওয়ারিশ হিসেবে খাসসহ হিন্দু সর্ব সাধারণের ব্যবহার্যে সম্পত্তিগুলো কালি মন্দিরের নামে রেকর্ড করারও দাবি জানানো হয়েছে। মন্দিরের সম্পত্তি ও অর্থ আত্মসাৎকারী “মন্দিরের স্ব-ঘোষিত ভূয়া মালিকদ্বয় ও তার দোসরদের” দ্রুত বিচার এবং নবগঠিত আহবায়ক কমিটি যাতে সুষ্ঠভাবে মন্দির পরিচালনা করতে পারে সে জন্য আবেদনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

এলাকার সর্বস্তরের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সামিল হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট সম্প্রতি অনলাইনে এই আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ৮৮ নং ঈশ্বরীপুর মৌজার তপশিলকৃত এসএ ৩৮৩ নং খতিয়ানের মধ্যে ২৭১, ২৭৬, ২৭৭, ২৭৮ ও ২৭৯ নং দাগের সম্পত্তি মন্দির শ্রেণীভুক্ত এবং এসব সম্পত্তি হিন্দু জনসাধারণের জন্য ব্যবহার্য হিসেবে এসএ খতিয়ানের মন্তব্য কলামে নোট করা আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মন্দিরের নামের জমি ভুয়া নামে রেকর্ড হয়েছে। তাছাড়া মন্দিরের পাশ্ববর্তী বাস্ত, ডাঙ্গা ও পুকুরসহ অন্যান্য দাগের জমিগুলো মন্দিরের উদ্দেশ্য ব্যবহার হওয়া স্বত্তেও মন্দিরের নামে কোন রেকর্ড হয়নি। মূল কালি মন্দিরটিসহ অন্যান্য দাগ নিয়ে বর্তমান সেটেলমেন্ট জরিপের প্রকাশিত ৫৯৫ নং খতিয়ানে লা-ওয়ারিশ ব্যক্তি সুরেন্দ্র নাথ, পিতা- কৃপা নাথ চট্টপাধ্যায়, গ্রাম- ঈশ্বরীপুর নামে মাত্র ৫ টি দাগে ৬৩ শতক রেকর্ড হয়েছে। উক্ত খতিয়ানে ১৩৬ দাগটি মন্দির শ্রেণী হিসেবে ০৭ শতক রের্কড থাকলেও ম্যাপে আছে ৪৯ শতক। উক্ত সম্পত্তিসহ অন্যান্য জমিগুলো ঈশ্বরীপুর যশোরেশ্বরী সার্বজনীন কালি মন্দিরের নামে না থাকলে অর্থাৎ ব্যক্তি নামে থাকলে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পার্বনে স্বাধীন ভাবে পূজা করতে যাওয়া বিভিন্ন প্রকার সমস্যা বিদ্যমান আছে।

প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত আবেদনে বলা হয়, “পবিত্র পুরান মতে সতী মায়ের ৫১ খন্ডের ০১ খন্ড এখানে পড়েছিল। যা একান্ন পিঠের এক পিঠ এই ঐতিহাসিক কালি মন্দি”। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের আমন্ত্রনে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী তার সফরকালে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত এই যশোরেশ্বরী কালি মন্দির দর্শন করে পূজা দেন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কমিউনিটি সেন্টারসহ অন্যান্য অনুদান ঘোষণা করেন। বেশ কয়েক বছর আগে জনৈক গিরিধারী লাল মোদী নামক এক ভক্ত প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত মন্দিরটি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ও অর্থ দিয়ে সংস্কার করেন। তারপর ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসার আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেশ কিছু সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়। জেলা, উপজেলাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু উন্নয়ন করা হয়। যা সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রশংসিত।

প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত আবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের প্রয়াত কালিকানন্দ চট্টোপাধ্যাযয়ের পুত্রদ্বয় জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় নিজেদেরকে স্ব-ঘোষিত সেবাইত পরিচয় দিয়ে বংশীপুর গ্রামের মৃত নিরাপদ হালদার এর পুত্র দিলীপ হালদার, ঈশ্বরীপুর গ্রামের নিমাই বিশ্বাসের পুত্র প্রহ্লাদ বিশ্বাস, অখিল রঞ্জন সাহার পুত্র অপূর্ব সাহা, খাগড়াঘাট গ্রামের আনন্দ মন্ডলের ছেলে দেব সাগর মন্ডলকেপুরোহিত নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে মন্দিরে ভক্তদের নিত্য দিনের প্রণামী, দক্ষিণা, দান বাবদ দৈনন্দিন উপার্জনের অর্থ আত্মসাৎ করছেন।” স্ব-ঘোষিত সেবাইতদ্বয়, মানুষকে ধোকা দিয়ে ভীতি প্রর্দশন করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের পারিবারিক মন্দির বলে দাবী করে আসছে।

আবেদনে বলা হয়, মন্দিরের সিএস, এসএ, আরএস খতিয়ান অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, এই স্ব-ঘোষিত সেবাইতদ্বয়, মন্দিরের মালিক নন। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন মন্দির নয়। ঐতিহাসিকভাবে এটি সার্ব-জনীন “যশোরেশ্বরী কালি মন্দির”। বেআইনিভাবে মন্দিরের সম্পদ, সরকারি অনুদান ও ভক্তদের নিত্য দিনের প্রণামী, দক্ষিণা, দান ও সোনার গহনা সহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাৎ করে মন্দিরের কোন উন্নয়ন না করে নিজেরা ভোগ বিলাস করছে। যা চরম অমানবিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবেদনে এসব অপরাধ তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত আবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর নিকট ঘটণা তদন্ত করার জন্য পৃথক পৃথক আবেদন করা হয়। সেসব আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার উপর দায়িত্ব অর্পন করেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার ২০২২ সালের ৪ জুলাই তারিখে প্রতিবেদন ও বর্তমান আহবায়ক কমিটি অনুমোদনের প্রতিবেদনসহ সকল রেকর্ডপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ শ্রামনগর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর অফিসে দাখিল করা হয়। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমস্যার কোন সামাধান না করে এবং কোন রায় না দিয়ে আহবায়ক কমিটির ফাইলটি আহবায়ক কমিটির নিকট ফেরৎ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জমা দিতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গেলে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট ফেরত পাঠান। ফলে যশোরেশ্বরী কালি মন্দিরের বর্তমান আহবায়ক কমিটি স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন থেকে প্রত্যাখ্যতো হয়ে মন্তত্রনালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

আবেদনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল শ্রেণী বর্ণের সনাতন ভক্তদের উপস্থিতিতে গঠিত আহবায়ক কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি আশু শান্তিপূর্নভাবে সমাধান পূর্বক যাতে মন্দির শ্রেণির জমিগুলো মন্দিরের নামে অথবা বাংলাদেশ সরকারের নামে এবং বর্তমান সেটেলমেন্ট জরিপের ৫৯৫ নং বিএস খতিয়ানের জমি গুলো ৯২ (ক) ধারা মতে খাস করতঃ ঈশ্বরীপুর কালীমন্দিরের নামে ডি.সি.আর এবং জাতীয়করণ ও আন্তজার্তিক তীর্থ ক্ষেত্র হিসাবে ঘোষিত হয় এবং গঠিত আবহায়ক কমিটি যাতে মন্দির পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে সমুদয় ব্যবস্থা গ্রহণ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

Share