কার্ব মার্কেটে ডলারের ক্রয় মূল্য বেশী হওয়ায় বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডিতে আসছে রেমিট্যান্স

গাজী আবু বকর : ব্যাংকের তুলনায় কার্ব মার্কেটে ডলারের ক্রয় মূল্য বেশী হওয়ায় বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডিতে আসছে রেমিট্যান্স। বর্তমানে ব্যাংকে নগদ ডলার কেনা হচ্ছে ১০৬ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে। অথচ কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ক্রয় হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৪ টাকার মধ্যে। কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকার মধ্যে। ফলে বাড়তি লাভের আশায় বৈদেশিক রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশে স্বজনদের নিকট ব্যাংকের পরিবর্তে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। আর এই হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্স এর পুরোটাই চলে যাচ্ছে কার্ব মার্কেটে। যা হিসেবের মধ্যে আসছেনা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশে এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার ১০৭ টাকা ধরে এই অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এই অংক আগের মাসের চেয়ে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার কম। যেখানে গত মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। পাশাপাশি আগের বছরের একই মাসের তুলনায়ও রেমিট্যান্স কমেছে ৩২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। আগের বছর ঈদুল ফিতরের সময়ে এপ্রিল ২০২২ এ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলএও) আগের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্সের ৪০ শতাংশ আসে ব্যাংকিং চ্যানেলে। বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ নগদ আকারে ও বাকি ৩০ শতাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। নগদ আকারে আসা রেমিট্যান্সের প্রায় পুরোটাই হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে তার ব্যক্তিগত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, রেমিট্যান্সের ৪২ শতাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। বাকি ৫৮ শতাংশ আসে ব্যাংকের মাধ্যমে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানায়, ঈদে সাধারণত রেমিট্যান্স বাড়ে। এবারের রেমিট্যান্সের গতি-প্রকৃতি দেখলে মনে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়েনি। রেমিট্যান্স বেশি এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে। কারণ রেমিট্যান্স প্রবণ এলাকাগুলোতে হঠাৎ নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা, মানিকগঞ্জ। এসব এলাকায় নগদ টাকার চাহিদা বেশি বেড়েছে। হুন্ডিতে রেমিট্যান্স আসায় ডলার ব্যাংকে জমা হয়নি। কিন্তু নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া বেশকিছু ডলার কার্ব মার্কেটে চলে গেছে। যে কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে।

সূত্র মতে, বিশেষ করে যেসব প্রবাসী ঈদের ছুটিতে দেশে এসেছেন তাদের মাধ্যমে অন্য প্রবাসীরা নগদ আকারে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সেগুলো ব্যাংকে না এসে কার্ব মার্কেটে চলে গেছে। কারণ কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি। ব্যাংকে নগদ ডলার কেনা হয় ১০৬ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে। কার্ব মার্কেটে ক্রয় হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৪ টাকার মধ্যে। ফলে বাড়তি লাভের আশায় অনেকেই ডলার কার্ব মার্কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির ফলে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ব্যাংকের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। এখন আবার তা বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা জানান, রোজা শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে ঈদের মার্কেট করতে কলকাতায় গেছেন অনেকে। অন্য সময়ের তুলনায় এবারের ঈদে এই প্রবণতা বেশি ছিল। ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। এ খাতে ব্যাংক থেকে তেমন ডলার মেলেনি। অপরদিকে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো বিক্রি করছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায়। ফলে কার্ব মার্কেট থেকেই ওই সব ডলার গেছে বেশি। যে কারণে রোজার শুরুতে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়েছে। ঈদের পর একটি শ্রেনী বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছে। এ খাতেও এখন ব্যাংক থেকে ডলার মিলছে খুবই কম। ফলে বেশিরভাগ ডলারই যাচ্ছে কার্ব মার্কেট থেকে। এ কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি।

Share