শাহজালালে স্বর্ণ পাচারে অর্ধশত বেবিচক কর্মী

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ক্রমেই ব্যস্ত হয়ে উঠছে। বাড়ছে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যও। গড়ে উঠছে বড় বড় স্বর্ণ পাচার চক্র। আর এদের ভেতর থেকে নিবিড় তত্ত্বাবধান করছেন স্বয়ং সরকারি কর্মচারীরা। উড়োজাহাজে করে স্বর্ণের বার বিদেশ থেকে নিয়ে আসে কারবারি। বিমানবন্দরে সেগুলো হেফাজতে নেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অর্ধশত কর্মী। তারা অবৈধ পণ্যগুলো নিরাপদে পৌঁছে দেন চক্রের হোতার কাছে। ডিউটির আড়ালেই এ ‘গুরুদায়িত্ব’ পালন করে আসছেন তারা। নেই চাকরি যাওয়ার ভয়ও। কেননা, পরিকল্পিত চক্র হওয়ায় তাদের ধরা পড়ার আশঙ্কা একেবারেই কম। আবার তদন্তে কারও নাম এলেও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ করে’ অব্যাহত রাখেন অপকর্ম। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে থাকা পাঁচ আসামি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার ৩৭ ভরি স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন– বিমানবন্দরে কর্মরত বেবিচকের লাউঞ্জ অ্যাটেনডেন্ট আবদুল ওহাব, কনভেয়ার বেল্টম্যান হাসান, শাহজাহান এবং তাজুল ইসলাম ও জামাল উদ্দিন। তাদের মধ্যে তাজুল ও জামাল পাচার চক্রের সদস্য। তাদের নামে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া বলেন, রিমান্ডের প্রথম দিনই মুখ খুলেছেন আসামিরা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দায়িত্ব পালনের আড়ালে চোরাকারবারিদের বহন করা কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় বেবিচকের কিছু অসাধু কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মীর সহায়তায় স্বর্ণ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তদন্তের স্বার্থে অনেক তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

রিমান্ডে আসামিদের দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখে কেন চক্রের অন্য সদস্যদের ধরা হয় না– এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আজিজুল হক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অনেক সময় সঠিক তথ্য দেয় না। আবার আংশিক তথ্য দেওয়ায় তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে ব্যক্তিগত আক্রশের কারণে ভুল তথ্য দিয়ে অন্যকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। আর আড়ালে থেকে যায় হোতা ও প্রকৃত অপরাধীরা। এ জন্য তাদের শনাক্ত করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির (অ্যাভসেক) কর্মকর্তারা জানান, স্বর্ণ চোরাচালানে যখন বেবিচকের কর্মীরাই জড়িত থাকেন তখন বিষয়টি অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের সন্দেহও করা যায় না, আবার ছাড়াও যায় না। তবে এর মধ্যেই কিছু কর্মী আছেন যারা পাচার চক্রের বিষয়ে তথ্য পেলে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানান। বৃহস্পতিবারও কয়েক কর্মীর তথ্য যাচাই করে তল্লাশি করার সময় ৩৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার হয়।

হযরত শাহজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, চোরাচালানে যেই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের নামে মামলা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য বেরিয়ে আসবে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। আরও যারা জড়িত আছে তাদের খুঁজে বের করা হবে।

বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার জানান, সম্প্রতি স্বর্ণ পাচারের কয়েকটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেবিচকের ১০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরপরও বিমানবন্দরে ডিউটির আড়ালে স্বর্ণ পাচার করছেন অসাধু কর্মীরা। তারা অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে এ কাজ করায় সহজে ধরা পড়ে না। তবে ধরা পড়লে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার ধরা পড়া তিন কর্মীকেও সাময়িক বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Share