খুলনা প্রতিনিধি : খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের নিজ বাড়ি থেকে গত ২৫ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার হন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শরিফুল আলম। পরদিন পাইকগাছা থানার পুরাতন একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে। সেই থেকে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন শরিফুল।
সড়ক অবরোধের প্রস্তুতিকালে ইট মেরে পুলিশ সদস্যদের আহত করা এবং পালানোর সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে শরিফুলের বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা করেছে কয়রা থানা পুলিশ।
পুলিশের দাবি, গত ২ নভেম্বর রাত ২টা ৫৫ মিনিটে কয়রা-পাইকগাছা-আশাশুনি তিন রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটান শরিফুল ইসলামসহ বিএনপি-জামায়াতের ৫৭ নেতাকর্মী। ওই রাতেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলাটিতে ৬ নম্বর আসামি করা হয় যুবদলের আহ্বায়ককে।
খুলনা থেকে কয়রা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। কারাগারে থাকা অবস্থায় এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পুলিশকে ইট ও ককটেল নিক্ষেপের কথা শুনে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন শরিফুলের ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২৫ অক্টোবর রাতে সবার সামনে ভাইকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। গত ৮ দিন ধরে তিনি জেলে। ভাই কিভাবে ইট-পাটকেল বা ককটেল মারবে?
কয়রা থানায় দায়ের করা মামলাটির বাদী এসআই সালাহ উদ্দিন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২ নভেম্বর রাত ২টা ৪৫ মিনিটে কয়রা-পাইকগাছা-আশাশুনি তিন রাস্তার মোড়ে এজাহারভুক্ত আসামিরা অবরোধ কর্মসূচি সফল, আসন্ন সংসদ নির্বাচন বানচাল, কয়রার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করার জন্য সমবেত হন।’
এসআই সালাহ উদ্দিন আরও অভিযোগ করেন, ‘রাত ২টা ৫৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে এজাহারভুক্ত আসামিরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ইটের আঘাতে ৯ পুলিশ আহত হন। আত্মরক্ষার্থে ৬ রাউন্ড শটগানের গুলি করা হয়। আসামিরা ঘটনাস্থলে ৪-৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।’
মামলায় কয়রা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম, খুলনা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির এবং ওই আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদসহ বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের ৫৭ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
কয়রা তিন রাস্তার মোড়টি গুরুত্বপূর্ণ। এরপাশে বেশকিছু দোকানপাট রয়েছে। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই রাতে ককটেল বিস্ফোরণ বা গুলির আওয়াজ কেউ শোনেননি।
কয়রা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবুল বলেন, ‘পুরো ঘটনাই বানোয়াট। শুধু শরিফুল কেন-এজাহারে যাদের নাম দেয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই এলাকার বাইরে থাকেন। সারাদেশে ‘গায়েবী’ মামলার যে ঢেউ শুরু হয়েছে, কয়রাও এর বাইরে নেই।’
মামলার বাদী এসআই সালাহ উদ্দিন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়। এসব বিষয়ে আমাদের কথা বলা নিষেধ।
এ ব্যাপারে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের বক্তব্য জানতে কয়েক দফা ফোন করা হয়। ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। একবারও তিনি সাড়া দেননি।