জাল সনদে ১০ বছর প্লেন চালিয়েছেন বিমান কর্মকর্তার স্ত্রী সাদিয়া

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : জাল সনদে ১০ বছর প্লেন চালিয়েছেন বিমান কর্মকর্তার স্ত্রী সাদিয়া আহমেদ। বৈমানিক হতে হলে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানে পড়তে হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিয়মানুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতসহ এইচএসসি বা সমমানের সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বিজ্ঞানে না পড়েও জাল সনদ জমা দিয়ে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমানের বৈমানিক হিসেবে নির্বাচিত হন এয়ারলাইন্সটির সাবেক চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের স্ত্রী সাদিয়া আহমেদ। ২০০১ সালে তিনি শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের মানবিক শাখা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা পাসের সনদ জমা দেন।

সাদিয়া প্রথমে জিএমজি এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু হিসেবে নিয়োগ পেলেও পরবর্তীতে দিয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে চাকরি নেন। এসব জায়গায় প্রায় ১০ বছর চাকরি করেছেন। বিমানে যোগদানের আগে জাল সনদের ম্যাধমে বৈমানিক হওয়া সাদিয়া আকাশে উড়েছেন। যদিও পরবর্তীতে এসব এয়ারলাইন্স থেকে তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জাল সনদ দিয়ে কিভাবে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) পেলেন সাদিয়া সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। তাছাড়া এর সঙ্গে বেবিচকের কোনো চক্র জড়িত আছেন কিনা তাও তদন্তের দাবি রাখে। তা না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের বৈমানিকের হাতে পড়ে শতশত যাত্রী প্রাণ হারাতে পারেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিমান কর্তৃপক্ষ কৃত্রিম বৈমানিক সংকট দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে ১৪ জনকে নিয়োগ দেয়। বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য ৫ বছরের চুক্তিতে ৮ জন ক্যাপ্টেন ও ৬ জন ফাস্ট অফিসার নিয়োগ করতে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিমান। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজনের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এদের মধ্যে অন্যতম সাদিয়া আহমেদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক বৈমানিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিমানের ইতিহাসে জাল সনদের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত কোনো বৈমানিক নিয়োগ পাননি। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য এটি লজ্জাজনক ঘটনা। একজন বৈমানিক হিসেবে তিনি নিজেও এ ধরনের গুরুতর অন্যায় মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জাল সনদের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া বৈমানিকেরা শনাক্ত হয়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এখন এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও জাল সনদের চক্রের হোঁতারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

বিমানের আরেক বৈমানিক বলেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে শুধু চাকরিচ্যুত করলেই হবে না, এদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যাতে করে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করার আগে বারবার এই ঘটনার শাস্তিকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে, সাদিয়া তার স্বামীর প্রভাব খাঁটিয়ে বিমানে নিয়োগ পান। বিমানের চুক্তিতে বলা হয়েছে, তার মূল বেতন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও বাড়িভাড়া ৮৫ হাজার টাকা।

অন্যদিকে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নির্বাচিত আল মেহেদী ইসলাম এয়ারলাইন ট্রাস্পপোর্ট লাইসেন্সের (এটিপিএল) জাল সনদ জমা দেন। বেবিচকের সহকারী পরিচালকের সই জাল করে এই সনদ তৈরি করেন তিনি।

বেসামরিক বিমান চলাচল আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি শিক্ষা সনদ, নিবন্ধন সনদ, লাইসেন্স বা পারমিট জাল বা পরিবর্তন করেন বা করার চেষ্টা করেন, তাহলে অনধিক ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বেবিচকের তদন্তে সম্প্রতি এই দুই বৈমানিকের জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এখন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি প্রমাণিত হয়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর জালিয়াতি করার সাহস না পায়।

সনদ জালিয়াতি করে নিয়োগ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিমানের কতিপয় কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণরত বৈমানিকেরা পূর্ণাঙ্গ বৈমানিক নন, সেই হিসেবে তারা সামান্য কিছু বেতন পান। বিমানের সব নিয়ম ভেঙে প্রথমবারের মতো এদের প্রশিক্ষণ ফ্লাইট নয়, প্রথম ফ্লাইটের তারিখ থেকে পুরো বেতনই শুধু নয়, মোটা অংকের ভাতাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। অথচ ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২১ সালে নিয়োগ নিয়োগ পাওয়া বৈমানিকদের কেউ এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাননি।

Share