যে কারণে গুলশানের সেই বাড়ি সরকারকে দিতে হচ্ছে সালাম মুর্শেদীকে

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : ঢাকার গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত যে বাড়িটি সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ, সেটিকে ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। এই সম্পত্তি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার এই রায় দেন। ওই সম্পত্তির অবস্থান বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিবকে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন (অ্যাফিডেভিট ইন কমপ্লায়েন্স) দিতে বলা হয়েছে।

আবদুস সালাম মুর্শেদী আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার। তিনি গুলশান-২-এর ১০৪ নম্বর সড়কে অবস্থিত ২৯ নম্বর বাড়িটি (সি.ই.এন (ডি)-২৭) দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ। পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত এই বাড়ি দখলে রাখার অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক (বর্তমানে সংসদ সদস্য)। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে বাড়িসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

এরপর রাজউক নথি দাখিল করে। পরে বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে ওই ভূমি বা প্লটের চেইন অব টাইটেল (মালিকানা হস্তান্তরের পরম্পরা), দখলসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে পক্ষগুলোকে হলফনামা (অ্যাফিডেভিট ইন অপজিশন) দাখিল করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে দুদককে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তথ্য দাখিল করে। চূড়ান্ত শুনানি শেষে পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাসহ রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেওয়া হয়।

রায়ে আদালত বলেন, ওই সম্পত্তি অন্যদের ও সালাম মুর্দেশীর নামে হস্তান্তর হয় বলে নথিতে দেখা যায়। তবে পরিত্যক্ত সম্পত্তির প্রকৃতি ও ধরনের পরিবর্তন হয়নি। উপযুক্ত আদালতের মাধ্যমে অবমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। তাই পরিত্যক্ত এই সম্পত্তি আগ্রহী ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে হস্তান্তর বেআইনি। ইতিমধ্যে দুদক ফৌজদারি মামলা করেছে ও তদন্ত চলছে। এই সম্পত্তি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেওয়া হলো। যেহেতু এজাহার হয়েছে, তাই দুদককে আইন অনুসারে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হল। এই সম্পত্তি হস্তান্তরে জালিয়াতি ও সহযোগিতায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততা পেলে সেক্ষেত্রে কার্যধারা গ্রহণ করতেও দুদককে নির্দেশ দেওয়া হল।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী অনীক আর হক ও সৈয়দ সায়েদুল হক, সালাম মুর্শেদীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে অংশ নেন।

সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ বলেন, রাজউকের অনুমতি নিয়ে ১৯৯৭ সালে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে এক বিঘা আয়তনের ওই সম্পত্তি ভোগ করে আসছেন সালাম মুর্শেদী। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।

Share