নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফসহ দাতা সংস্থার ঋণের ২ দশমিক ০৫ বিলিয়ন বা ২০৫ কোটি ডলার বৃহষ্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে এখন আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, খরচযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৮৯ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের আকার হয়েছে ২৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক এ খবর নিশ্চিত করেছেন ।
গত বৃহষ্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯২৭ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার মার্কিন ডলার। আর গ্রস রিজার্ভ রয়েছে ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৬২ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। গত বছর ২৬ জুন যার পরিমাণ ছিলো ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১১৪ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যার পর আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন বা ১১৫ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার আইবিআরডি ও আইডিবির ঋণের ৯০ কোটি ডলার আসায় রিজার্ভ ২১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৮৯ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ডলারে পৌঁছালো। এরআগে, গত ২৪ জুন সোমবার ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয়া হয়। আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার আসে গত বছরের ডিসেম্বরে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়েছিল বাংলাদেশের। ডলারের বিপরীতে টাকা মান কমতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে। তখন ২০২২ সালের জুলাইতে দ্রুত ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়ে আবেদন করে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তি অনুমোদন দেয় সংস্থাটি। পরে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরের কিস্তিগুলো সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন ও আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়ে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির অর্থ পায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া, আইবিআরডি ও আইডিবির ঋণের ৯০ কোটি ডলার পায় বাংলাদেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত ১২ জুন বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ছিলো ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ৬ জুন ছিলো, ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত ১৯ জুন ১ হাজার ৯৫২ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার বা ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত ৩০ মে গ্রস রিজার্ভ ছিলো ২ হাজার ৪১৬ কোটি ১৪ লাখ বা ২৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত ৬ জুন বেড়ে হয়, ২ হাজার ৪২৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮০১ হাজার বা ২৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৩ জুন বেড়ে হয় ২ হাজার ৪৫২ কোটি ১৬ লাখ বা ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর গত ১৯ জুন গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার বা ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর ১৯ জুন গ্রস রিজার্ভ ছিলো ২ হাজার ৯৯১ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার বা ২৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর ৩০ জুন গ্রস রিজার্ভ ছিলো ৩ হাজার ১২০ কোটি ৩০ লাখ বা ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দেশে যত বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তার চেয়ে বেশি বের হয়ে যাওয়ায় গত প্রায় তিন বছর ধরে রিজার্ভ কমছে।