সীমিত পরিসরে লেনদেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সীমিত পরিসরে লেনদেনের দ্বিতীয় দিনে গ্রাহকের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবারও অধিকাংশ গ্রাহককে দেখা গেছে টাকা উত্তোলন করতে। সেই তুলনায় জমার হার ছিল খুবই কম। ফলে গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই হিমশিম খেতে হয়েছে। কলমানি বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বড় অঙ্কের টাকা ধার করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সপ্তাহের শুরুতে আজ রবিবারও এই ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে হওয়া সহিংসতা ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ টানা পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। এটিএম বুথেও টাকার স্বল্পতা ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ বিকাশ, রকেট বা নগদের মাধ্যমেও লেনদেন না করতে পারায় ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ও বৃহষ্পতিবার গ্রাহকরা সীমিত পরিসরে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন করার সুযোগ পান। সীমিত পরিসরে লেনদেনের প্রথম দিনেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো নিয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা নিয়েছে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে দ্বিতীয় দিনে ধারের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এদিন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ধার করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো নিয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি কলমানি বাজারেও এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার করে গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা পূরণ করছে। ফলে কলমানিতে সুদের হারও কিছুটা বেড়েছে। গত বৃহষ্পতিবার কলমানিতে গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এমনিতেই ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় গ্রাহকের চাহিদা বেড়েছে। এটা স্বাভাবিক। তবে এ সময় যদি ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশি টাকা দেয়, তাহলে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ধার নেওয়া এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে থাকা হিসাবে ঘাটতি ও নগদ জমায় (সিআরআর) ঘাটতি হিসেবে ব্যবহার করে অনেক ব্যাংক। আবার অনেক ব্যাংক নগদ টাকা নিয়ে গ্রাহকের চাহিদা মেটায়।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে টানা তিন দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। সে কারণে ব্যাংকে ভিড় বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে কোথাও টাকা দিতে পারছে না এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে নেই।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গত বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, অ্যাসিউরড রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির (আইবিএলএফ) নিলাম হয়। এতে সাত দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৯টি ব্যাংককে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, ২৮ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১২টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৮০ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড রেপো আওতায় তিনটি ব্যাংককে ৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং এক দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় একটি ব্যাংককে ৪৯৭ কোটি টাকা ও ২৮ দিন মেয়াদে পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংককে ৯৮৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বুধবারে ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সাত দিন মেয়াদে টাকা ধারের সুদহার ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৪ দিন মেয়াদে সুদহার ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২৮ দিন মেয়াদি টাকা ধারের সুদহার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া অ্যাসিউরড রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটির সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ। ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার সাড়ে ৫ শতাংশ। ২৮ দিন মেয়াদি ইসলামী ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ।

Share