সংস্কারে দেশের শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার চিন্তা

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : সংস্কারে দেশের শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার চিন্তা ভাবনা চলছে। সব সময় আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলা হয়। কিন্তু কার্যত তা অনুপস্থিত।বর্তমানে ক্ষমতাচর্চার প্রচলিত বন্দোবস্ত অনুযায়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায় সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর এখন রাষ্ট্রব্যবস্থায় গভীর সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। এই সংস্কারের একটি অংশ হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কাটছাঁট করে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানো। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সরকারের প্রভাবশালী মহলে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোসহ সার্বিক ক্ষমতাকাঠামোতে ভারসাম্য আনা বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় নাও সম্ভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হতে পারে। হয়তো শুধু নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠনও করা লাগতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর মতে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠানের সভায়।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এক ব্যক্তির শাসন বাংলাদেশে শুরু থেকেই আছে। ১৯৭৪ সালে সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল করে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থায়ও তা অব্যাহত থাকে। ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থা আবার চালুর পর প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাবান করা হয়। সংসদীয় পদ্ধতির মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া অসংগত হলেও যতবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, ততবারই ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

বর্তমান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্য দুটি অনুচ্ছেদের শর্ত মেনে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি অনুযায়ী পালনের বাধ্যবাধকতা আছে।

প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা প্রসঙ্গে আনু মোহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষমতা ও সুবিধা দুটোই কমাতে হবে। বারবার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এ সুযোগও বন্ধ করতে হবে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি হলেই জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকা যায়, এটাও ঠিক নয় বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি থাকা নিশ্চিত করা ও ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার জন্য সংবিধানের বড় সংস্কার দরকার হবে, এমনটা উল্লেখ করে আনু মোহাম্মদ বলেন, তা না হলে যারাই নির্বাচনের পর ক্ষমতায় যাবে, তারাই স্বৈর আচরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার পর ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকার। এরপর গত রোববার বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রব্যবস্থায় গভীর সংস্কার ও জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গতকাল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা অনেক। এই আশা পূরণ করতে হলে নতুন সংবিধান তৈরির দিকেই যেতে হবে। আর সেটা করতে হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণঅভ্যুত্থান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে গত বুধবার বক্তব্য দেন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। এ সময় তিনি বলেন, আগে রাষ্ট্র গোছাতে হবে। বর্তমান সংবিধান বাতিল করে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। এতে মানুষের মনোভাবের প্রতিফলন থাকতে হবে।সবাই মিলে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে নির্বাচিত করা হয়েছে, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করিয়ে ড. ইউনূসকে জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হবে।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, একটি স্থিতিশীল শৃঙ্খলাপূর্ণ সরকারব্যবস্থা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এক বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হবে।

Share