বিআরআইসিএম মহাপরিচালক মালা খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ, চাকরিচ্যুতির দাবি

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম)-এর মহাপরিচালক (অতিঃ দাঃ) ড. মালা খানের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, এবং অফিসকে পারিবারিক কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সাইন্সল্যাবে বিআরআইসিএম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা মালা খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমান, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান, জাবেদ বিন আহমেদ, মোঃ মোস্তফা হোসেন, মোঃ আবু হাসান, মোঃ তৌহিদুল ইসলাম সহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিআরআইসিএম, যা ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, শুরু থেকেই ড. মালা খানের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, মালা খান তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমকে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেছেন। এছাড়া, সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করেছেন বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, মালা খান প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) আওতাধীন ডিআরআইসিএম-এর চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগের সময় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করলেও অজানা কারণে তার আবেদন গৃহীত হয় এবং তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তিনি American World University নামক একটি অস্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে রসায়ন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন, অথচ তার একাডেমিক অভিজ্ঞতা কম্পিউটার সায়েন্সে ছিল। এছাড়া, তার পিএইচডি থিসিসের সুপারভাইজর হিসেবে নাম উল্লেখিত ড. এস এম ইমামুল হক ও কো-সুপারভাইজর হিসেবে তার স্বামী কেএম মোস্তফা আনোয়ারেরও রসায়নে ডিগ্রি নেই।

অভিযোগ উঠেছে, মালা খান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকারি অর্থের অপব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, Augmentation of Chemical Metrology Infrastructure প্রকল্পের অধীনে বিআরআইসিএম-এর জন্য আইন, বিধি, প্রবিধান তৈরির জন্য যে তিন কোটি টাকার কাজ করা হয়, সেটি নিয়মবহির্ভূতভাবে ড. বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর নামকরণ করা Development Solution (Devsol) কোম্পানিকে দেওয়া হয়, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া, করোনাকালীন সময়ে ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া (VTM) এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রয় বাবদ প্রায় ৩৫-৪০ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে কাঁচামাল ক্রয়ে অনিয়ম করে প্রায় ১২-১৫ কোটি টাকা লোপাট করা হয়।

প্রতিষ্ঠানে মালা খানের আচরণ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর একটি গোপন কক্ষ রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যায় যা অসৎ কার্যকলাপের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া, তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মালা খানের রুমের পাশে একটি সুরঙ্গ রয়েছে, যা দিয়ে বের হওয়ার রাস্তা পাওয়া যায়। এই সুরঙ্গের একটি দরজা খুলে যে রুমে প্রবেশ করা যায়, সে রুমের কর্মকর্তার নাম রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা (প্রশাসন)। মাহমুদুল হাসান রাজু বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

মালা খানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে আহাদ ইসলাম নামে একজন সহযোগী ছিলেন, যিনি জুনিয়র টেকনিশিয়ানের পদে কর্মরত ছিলেন। যদিও তার কাজ মূলত ল্যাবে ছিল, বাস্তবে তাকে অফিসে মালা খানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত রাখা হতো। তিনি চুক্তিভিত্তিকভাবে কর্মরত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, মালা খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারা সরকারের কাছে অনুরোধ জানান, যেন মালা খানকে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং তার সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।

এ নিয়ে বিআরআইসিএম-এর সকল বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আইন অনুযায়ী মালা খানকে চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে চলমান মামলার কার্যক্রম আবার শুরু করে দ্রুততম সময়ে রায় দিয়ে অভিযোগ প্রমাণের সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

Share