নয়াবার্তা প্রতিবেদক : ইলিশের রপ্তানি মূল্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর কারণ হলো, দেশের বড় বড় মাছের বাজারে আড়তে পাইকারিতে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে একই আকারের ইলিশ প্রায় ৫০০ টাকা কমে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে। এবারে প্রথম দিনে গত বৃহস্পতিবার ৭টি ট্রাকে ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি আকারের ২৫ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ১০ মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে।
এদিকে দেশের বাজারগুলোতে গতকাল খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। অর্থাৎ ভারতে যে দামে রপ্তানি হচ্ছে, তার চেয়ে প্রতি কেজিতে প্রায় ৯০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাদের।
জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা দিতে পারবেন। তবে আমি যেটা জানি সেটা হলো, ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের। তখনকার বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে ১০ ডলারে প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এখনো সেই পরিপত্র অনুযায়ীই রপ্তানি হচ্ছে।’ তবে ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম সমন্বয় হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
যশোর শহরের বড় বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬৫০ টাকা বিক্রি হয়, সেখানে ভারতে ১০ ডলার বা ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজিতে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশ গতকাল দেড় হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা থেকে সরে এসে তারা ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। আর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পায় ৪৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ২ হাজার ৪০০ টন, আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে। গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের প্রধান নিয়ন্ত্রককে চিঠি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানান, গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৭টি ট্রাকে করে ২৫ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে ২ হাজার ৪০০ টনের কিছু বেশি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে। তবে রপ্তানিকারকদের আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় মাছ আমদানিকারকদের সংগঠন ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এফআইএ) বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি অনুমোদন দেওয়ার জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে অনুরোধ জানানো হয়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বিশেষ বিবেচনায় প্রথমে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলে রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে ২ হাজার ৪২০ টনে চূড়ান্ত করা হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হয়েছিল। পরে আবার রপ্তানি শুরু হয়। তবে বিশেষ বিবেচনায় শুধু দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম বলেন, গতকাল যে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে তার সাইজ ৭০০ গ্রাম থেকে কেজির ওপরে। গড়ে ১০ ডলার কেজি দরে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে।’