সাতক্ষীরা প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় শিবিরের নেতা-কর্মীদের মারধরের জেরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হক (দোলন) ও তাঁর বাবা দুই বারের সাবেক সাংসদ এ কে ফজলুল হকের বাড়িতে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার গুমানতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবিরের ২০–২২ নেতা-কর্মী দাওয়াতি কাজের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হকের বাড়িসংলগ্ন গুমানতলী কামিল মাদ্রাসায় যান। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় লোকজন ও মাদ্রাসার ছাত্ররা তাঁদের বাধা দেন এবং মারধর করেন।
শিবিরের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আতাউল হকের ছেলে ফাহিম রাব্বির নির্দেশে তাঁদের মারধর করা হয়। হামলায় উপজেলা শিবিরের সাহিত্য সম্পাদক আসাদুল্লাহ সাঈদী (১৯), মহসীন কলেজের সেক্রেটারি আল শাহরিয়ার (১৭), পৌর সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল সিয়ামসহ (১৬) কয়েকজন আহত হন। তাঁদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শিবিরের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিবিরের কয়েক শ নেতা-কর্মী উপজেলা সদরে জড়ো হন। তাঁরা লাঠিসোঁটাসহ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গুমানতলী গ্রামে গিয়ে আতাউল হক ও তাঁর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে ফজলুল হকের বাড়িতে হামলা করেন। একপর্যায়ে বাড়ি দুটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনার সময় আতাউল হক ও তাঁর বাবা ফজলুল হক বাড়িতে ছিলেন না।
সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আতাউল হক বলেন, শিবিরের ২০–২৫ নেতা-কর্মী তাঁদের বাড়ির পাশে গুমানতলী মাদ্রাসায় গেলে এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে বিবাদে জড়ান। তখন তাঁর ছোট ছেলে ফাহিম এলাকাবাসীকে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এ ঘটনার পর তাঁর ছেলের নেতৃত্বে শিবির কর্মীদের মারধরের অভিযোগ তুলে বিকেলে জামায়াত-শিবিরের ৩০০–৪০০ লোক তাঁদের দুটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।
জানতে চাইলে শিবিরের উপজেলা সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বলেন, সংগঠনের দাওয়াতি কাজে যাওয়ার পর বিনা উসকানিতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের ছেলে ফাহিমের নির্দেশে নেতাদের ওপর হামলা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এতে সংগঠনের ১৬ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা বিকেলের দিকে হামলায় নেতৃত্বদানকারী ফাহিমের বাবা ও দাদার বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়েছে।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, শিবিরের নেতা-কর্মীরা দাওয়াতি কাজে গুমানতলী মাদ্রাসায় গেলে ছাত্রলীগের সদস্যরা তাঁদের মারধর করেন। এতে চারজন আহত হন। আহত শিবির কর্মীদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তখন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও হঠাৎ বিকেলের দিকে উত্তেজিত জনতা ও শিবির কর্মীরা আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও তাঁর বাবার বাড়িতে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে দ্রুত সেনাসদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, শিবির কর্মীদের মারধরের ঘটনায় উপজেলা শিবিরের সভাপতি রাশিদুল ইসলামের বাবা ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে গতকাল রাতে ১৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।