বিশেষ প্রতিনিধি : শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ জনের খোঁজ এখনো মেলেনি বলে জানিয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। গুম তদন্ত কমিশন বলেছে, নিখোঁজ এসব ব্যক্তির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এবং তাদের সন্ধান পাওয়া কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। কমিশন বলছে, গত ৩১ অক্টোবর সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৬০০’র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। ১৪০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তার টানা ১৬ বছরের কঠোর শাসনের অবসান ঘটে। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে শত শত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং আরও অনেককে বেআইনিভাবে অপহরণ ও গুম করার অভিযোগ।
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গঠিত গুম তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, হাসিনার পতনের পর পাঁচজনকে গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই এখনো নিখোঁজ।
কমিশনের সদস্য নূর খান বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, কমপক্ষে ২০০ জনের এখনো খোঁজ মেলেনি। আমরা তাদের সন্ধানে কাজ করছি।
কমিশন জানিয়েছে, ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় আটটি গোপন বন্দিশালার খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব বন্দিশালার কয়েকটি কক্ষে মাত্র তিন-চার ফুট জায়গার মধ্যে মানুষকে বন্দি রাখা হতো। কক্ষগুলোর দেওয়ালে আটক ব্যক্তিদের হাতে আঁকা দিন গণনার চিহ্ন দেখা গেছে।
একজন কমিশনার জানান, হাসিনার পতনের পর অজ্ঞাত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব গোপন বন্দিশালার প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে।
কমিশনাররা বলেছেন, অধিকাংশ নিখোঁজের ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-কে দায়ী করে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০২১ সালে জ্যেষ্ঠ সাত কর্মকর্তাসহ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। হাসিনার শাসনামলের কিছু গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।
তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হাসিনার শাসনামলে সরকারি ও বিচার ব্যবস্থার সাংগঠনিক ভাঙনের কারণে দায়মুক্তির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জনস্বার্থে নয়, বরং নিজেদের এজেন্ডা ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি একটি ‘সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া’ সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা পেয়েছেন। এটি নতুন করে সাজানোর প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যতে স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তন রোধ করা যায়।
গুম কমিশনে ১৬০০’র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে:- গুম সংক্রান্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, কমিশনে অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে গত ৩১ অক্টোবর। এই সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৬০০’র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। ১৪০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে কমিশনের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আসামিদের কীভাবে অ্যারেস্ট করবে, তার ডিটেলস গাইড লাইন আছে। সেটা কিন্তু ফলো করা হয়নি। আইজিপি দেশের বাইরে আছেন, তিনি দেশে এলে কমিশনে নিয়ে আসব। একটা সার্কুলার দেওয়ার জন্য বলব। তাহলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে, ভায়োলেন্স হবে না। গুমের সঙ্গে কারা সংশ্লিষ্ট সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গুমের সঙ্গে বাহিনীর কতজন সদস্য সংশ্লিষ্ট, প্রশ্নে তিনি বলেন, সেই সংখ্যাটা এখনো বলা যাবে না। ৭ নভেম্বর থেকে বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। আমরা সমন ইস্যু করে দিয়েছি। প্রথম দিন সাতজনকে ডাকা হয়েছে। তারপর তিনজন, সাতজন, পাঁচজন এভাবে চলতে থাকবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ডিজিএফআইয়ের সদস্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।