ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ আছে ১৫ বিলিয়ন ডলার

১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আকুর দায় পরিশোধ

বিশেষ প্রতিনিধি : গতকাল এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন আকুভুক্ত ৯টি দেশের আমদানি বিল বাবদ মোট ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমে বিপিএম৬ হিসাবানুযায়ী ২০ দশমিক ০০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ রিজার্ভ থেকে দায় দেনা ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ থাকবে ১৫ বিলিয়ন ডলার। যা আইএমএফ’র বেঁধে দেয়া সীমা ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আকুর বিল পরিশোধের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। যদিও গত সপ্তাহে বিপিএম হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়নের ওপরে। আর নিট রিজার্ভ ছিলো ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার আকুর দায় পরিশোধ ও সমন্বয় করা হয়। বর্তমানে দেশের নিট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ হিসাবে ২০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। রিজার্ভ কমলেও আজ অব্দি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েব সাইটে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ দেখানো হচ্ছে ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব পদ্ধতি অনুসারে রিজার্ভ দেখা যাচ্ছে ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভে বিদেশি অনুদান যোগ হয়েছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। এর আগে গত ১১ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে আমদানি পণ্যের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিল বাবদ ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। এর ফলে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে (বিপিএম-৬) নেমে যায়। গত এক মাসে বিদেশি মুদ্রার এই সঞ্চয় বাড়তে বাড়তে এখন গত সপ্তাহে ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের বিপিএম-৬ ও নিজস্ব হিসাবের বাইরে আরেকটি হিসাব রয়েছে। সেটি হলো ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ। যেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসেবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়। এ তথ্য শুধু আইএমএফকে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলার আছে। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের তিনটি হিসাব সংরক্ষণের মধ্যে প্রথমটি হলো বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভ। মোট রিজার্ভের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহজ শর্তের ঋণসহ কয়েকটি তহবিল। দ্বিতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবায়ন পদ্ধতি, অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তহবিল বা ঋণের অর্থ বাদ দিয়ে একটি তহবিল। এর বাইরে হিসাবটি ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুইবার ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। সে সময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কেনার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানো হয়। বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আবার বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বাড়ছে রিজার্ভ।

Share