নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা মেলেনি এনবিআরের তদন্তে।
অভিযোগে তার নামে যেসব বাড়ি ও ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। এর মধ্যে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুর-শাশুড়ির ধানমণ্ডির বাড়িটিও রয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (শুল্কনীতি ও আইসিটি) ও তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ৪ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের একটি কপি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।
বেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদসহ ২৪টি অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তদন্তে সেসব অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী নিজের ঠিকানা হিসেবে ধানমণ্ডির যে হোল্ডিং নম্বর ব্যবহার করেছেন সেটিও তার নয়। যেসব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ করা হয়েছে, তদন্তে সেসব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নাম-ঠিকানারও সত্যতা মেলেনি।
‘বেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগের মধ্যে তদন্তযোগ্য অভিযোগগুলোর তদন্ত করা হয়। তদন্তকালে প্রাপ্ত দলিলাদির ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি’- এমন মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাহাদাত হোসেন নামের এক ব্যক্তি ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাসার ঠিকানা উল্লেখ করে সম্প্রতি কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এনবিআর ও দুদকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে ৪৮০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির কথা বলা হলেও এ বিষয়ে তদন্তে সুনির্দিষ্ট বিল অব এন্ট্রি সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি। অভিযোগে শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামীয় এক ব্যবসায়ীর মালিকানা হিসেবে মেসার্স ট্রিনা অ্যাসোসিয়েশনের কথা বলা হলেও বাস্তবে ওই ব্যক্তি কোনো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নন।
অবৈধ সম্পদের অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে ধানমণ্ডির ১৫/এ, রোড নম্বর-৪-এর ১৫ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়। তদন্তকালে দেখা যায়, ওই বাড়ির মালিক ও বসবাসকারী মো. আতিকুল করিম ও পাপ্পু। ওই বাড়িতে একটি ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে।
এছাড়া অভিযোগে ধানমণ্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের ১৫ নম্বর বাড়িটি বেলাল চৌধুরীর নামে উল্লেখ করা হয়। তদন্তকালে ওই বাড়ির মালিকানা হিসেবে স্থানীয় তিন ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। এরা হলেন- উজির আফজাল, নাজির আফজাল ও তৈয়ব আফজাল।
ধানমণ্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িটিও বেলাল চৌধুরীর নামে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তদন্তকালে দেখা যায়, ওই বাড়িটি সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান মরহুম মাহবুব আলী খানের নামে। বাড়িটির বর্তমান মালিক সৈয়দ ইকবাল মান্দ বানু। তার দুই মেয়ে জোবায়দা রহমান ও বিন্দু। অভিযোগে বসুন্ধরা জি-ব্লকে ১০ কাঠা জমির ওপর ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ির কথা বলা হলেও ওই তথ্যেরও সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি।
অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে যশোর এসপি অফিসের পাশে ১৫ কাঠা জমির ওপর ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, ২ কোটি টাকা দিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের পাশে ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়। কিন্তু তদন্তে এর কোনো সত্যতাই মেলেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে নোয়াখালী শহরে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি নির্মাণের যে কথা বলা হয়েছে, তারও সত্যতা মেলেনি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫ নিউ ইস্কাটনে যে ফ্ল্যাটে বেলাল চৌধুরী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সেই ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির একজন সদস্য বলেন, আমরা সরেজমিন তদন্ত করে যা পেয়েছি তাই প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। এর বাইরে আমরা আর কিছু বলতে পারব না।
এদিকে প্রায় একই অভিযোগ দুদকেও দাখিল করা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী অনুসন্ধান কাজ করছেন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেলাল চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের কথাও রয়েছে। ওই অভিযোগেও বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কতিপয় সিঅ্যান্ডএফের এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বেলাল হোসাইন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে ২০০৯ সালের আগস্টে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ না পেয়ে অভিযোগটি নিষ্পত্তি (নথিভুক্ত) করা হয়েছিল।