নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : সকাল থেকেই বৃষ্টি। তাহলে কী চট্টগ্রাম টেস্টে হারতে হচ্ছে না আফগানিস্তানের সঙ্গে? বৃষ্টি দেখে আনন্দ যতোটা না পেয়েছেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা, তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট। ২০০১ সালে একবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বৃষ্টির কারণে টেস্ট ড্র করে সবার সে কি আনন্দ! কিন্তু তখন তো বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে নতুন। হারের মিছিলের মধ্যে একটি ‘না হারা’ তাই তখন স্বস্তি দিয়েছিল সবাইকে। কিন্তু টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ১৯ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর যদি হার এড়াতে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে হয়, সেটা কেমন কথা! আজ সারাটা দিন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ঠিক এ কথাই মনে হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তো টেস্টটা বাঁচাতে পারল না বাংলাদেশ। বৃষ্টির ফাঁকে–ফোকরে যে ১৭.২ ওভার খেলা হলো, তাতেই আফগানরা তুলে নিল বাংলাদেশের বাকি ৪ উইকেট। কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই টেস্ট ক্রিকেটে নবীন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২২৪ রানে আত্মসমর্পন করল সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ।
বিকেলে খেলা শুরুর পর একটা আশা ছিল সাকিব–সৌম্যরা অন্তত হারটা এড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু সেটি হয়নি। খেলা শুরুর পর প্রথম বলেই জহির খানের নিরীহদর্শন এক বলকে কাট করতে গিয়ে সাকিব ফিরে যান। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। রশিদ খানের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর তাইজুলও দাঁড়াতে পারেননি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রশিদের বলেই ফেরেন সৌম্য সরকার।
অথচ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই টেস্ট ম্যাচটা যেকোনো মূল্যে জেতার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু মাঠের খেলা দেখে মনে হলো সবটাই কথার কথা। গোটা দলের খেলা দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি যে ম্যাচটা ‘যেকোনো মূল্যে জেতার’ কথাটা মনে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। টসে হেরে বোলিংয়ে নেমে হলো নির্জীব বোলিং। আফগানিস্তান সহজেই তুলে ফেলল ৩৪২ রান। নিজেরা ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে টেনে–টুনে ২০৫। ১৩৭ রানের ঘাটতি নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ে নেমেও আফগানদের ঠেকানো গেল না। মাথার ওপর উঠল ৩৯৮ রানের বোঝা। টেস্টের শেষ দুটি দিন বিরাট লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে আরও বাজে ব্যাটিং। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ঠিক কথাটাই বললেন, চট্টগ্রাম টেস্টটা পুরোপুরিই হলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রয়োগের অভাব আর আফগান বোলারদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রদর্শনী।
আজ বিকেলে যে ১৫.১ ওভার খেলা হলো, এ সময়টুকুতে বাংলাদেশের শেষ চার ব্যাটসম্যান যে ব্যাটিং করলেন, সেটিতেও ফুটে উঠল গোটা টেস্টের চিত্র। কমপক্ষে ১৯ ওভার খেলা হবে, এই সময়টা টিকে থাকতে হবে। খুবই সহজ সমীকরণ। কিন্তু সাকিব মাঠে নেমেই আউট হয়ে গেলেন। জহির খানের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিকে কাট করতে গিয়ে আউট। সবকিছু বাদ দিন, মিরাজ, সৌম্যরাও শেষ অবধি লড়তে পারলেন না। প্রথম ইনিংসে লিটন দাস বড় ইনিংসের ভিত গড়েছিলেন। ফিফটি পেয়েছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু তারা নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। অসময়ে ফিরে গিয়ে দলকে বিপদে ফেলেছেন। দুই ইনিংসেই ব্যর্থ দলের দুই স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ইনিংসে নিজেদের ভুল শুধরাতে পারলেন না লিটন–মুমিনুল কেউই। সাকিব নিজেও দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে ছিলেন না তাঁর মধ্যে।
দ্বিতীয় দিন থেকেই হার দেখছিল বাংলাদেশ। সেটি আজ নিশ্চিত হয়েছে। আফগান অধিনায়ক দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট। মোহাম্মদ নবী তাঁর শেষ টেস্টে ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও বল হাতে ঠিকই অধিনায়ককে সহায়তা করেছেন। দুই স্পিনার জহির খান ও কায়েস আহমেদরা ছিলেন দুর্দান্ত। সদ্য টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তান চট্টগ্রামে রীতিমতো ছেলেখেলাই করে গেল বাংলাদেশকে নিয়ে।
টেস্ট খেলার ১৯ বছরের মাথায় এসে বাংলাদেশের জন্য এ এক বিরাট লজ্জাই।