বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিবেদক : বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকে বদলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ… বাংলাদেশ তা সম্ভব করেও তুলছে।

আজ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ শীর্ষ সম্মেলনের সার্বিক আয়োজন করে।

স্পেন থেকে অস্কার গার্সিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রোজি উইন্টারটন এবং বাংলাদেশ থেকে নাসিম মঞ্জুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

৭ এপ্রিল শুরু হওয়া চার দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, জুলাই বিপ্লবের পর সংঘটিত অর্থনৈতিক সংস্কারকে তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরির লক্ষ্যে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিনিয়োগকারী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকগণ।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনি যদি কোনো লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চান, তাহলে বাংলাদেশই আপনার সেই জায়গা।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ কাজ করে দেখায়, আর একবার কেউ শুরু করলে অন্যরাও তার অনুসরণ করে।
কীভাবে মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে সুখী হয়, তার বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘টাকা উপার্জন করে মানুষ নিঃসন্দেহে আনন্দ বা সুখ পায়, কিন্তু অন্যকে সুখী করার মধ্যে অতিরিক্ত আনন্দ বা সুখ নিহিত রয়েছে।’ সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করেন, তাহলে আপনি সুখ এবং অতিরিক্ত আনন্দ দুটিই পাবেন। কোনো খরচ ছাড়াই এই অতিরিক্ত আনন্দ আপনি লাভ করতে পারেন এবং এটি করে আপনি গর্বিত হবেন।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো এই অঞ্চলকেই দেখেন যেখানে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি একসাথে অর্থ উপার্জন এবং মানুষের জীবন পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই অতিরিক্ত সুখ বা আনন্দ উপভোগ করতে পারবে, যদি তারা তাদের প্রভাব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিশ্ব বদলে দেওয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার এবং এর মাধ্যমে নতুন সভ্যতা গঠনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলছি, আমরা ‘তিন শূন্য’র একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারি। এটা সরকার দিয়ে নয়, ব্যবসার মাধ্যমে করা সম্ভব। কারণ এটা সরকারের কাজ নয়, বরং ব্যক্তিমাত্র, মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মানুষ। আমরাই বিশ্বকে বদলে দিতে পারি।’ ব্যবসা-বাণিজ্য মানুষের হাতে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার তুলে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন সভ্যতা হবে এমন একটি সভ্যতা যেখানে কার্বন নির্গমন থাকবে না। ‘আমরা তা করতে পারি। এটি হওয়া উচিত ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে।’ কার্বন নিঃসরণকে আত্মবিধ্বংসী ব্যবস্থা আখ্যা দিয়ে তিনি সম্পদ কেন্দ্রীকরণ না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অর্থ উপার্জন আনন্দের হলেও, সম্পদের কেন্দ্রীকরণ মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। ‘এটি পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলবে।’ তিনি শূন্য বেকারত্বের ধারণার প্রতিও গুরুত্ব দেন এবং বলেন, তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দিতে সক্ষম।


১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের নিদারুণ কষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তবে ১৯৭৪ সাল থেকে এই স্বল্প সময়ের যাত্রায় আমরা এক অভূতপূর্ব অবস্থানে চলে এসেছি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তিনি বলেন, আপনারা আমাদের এই অগ্রযাত্রায় সামিল হন।

অধ্যাপক ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়নের কথাও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরেন।

Share