আগুনে পুঁড়লো ফ্যাসিস্ট হাসিনার মুখাবয়ব

আনোয়ারা পারভীন : ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসেবে নববর্ষের শোভাযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বানানো পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার যে মুখাবয়ব তৈরি করা হয়েছিল তা নাশকতার আগুনে পুড়ে গেছে। এটি নৈরাজ্যবাদীদের কাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য যে সাতটি বড় মোটিফ তৈরি করা হয়েছিল তার একটি শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদী মুখাবয়ব। এটি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বড়ো এই মোটিফে আগুন লাগানোর কারণে আশেপাশের অন্যান্য কিছু মোটিফও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর গতকাল শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চারুকলা অনুষদে বানানো মোটিফে এক ব্যক্তিকে আগুন দিতে দেখা গেছে। প্রক্টর বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে একজন ব্যক্তিকে মোটিফে আগুন দিতে দেখা গেছে। তিনি প্রথমে পর্দার আড়ালে প্রবেশ করেছেন। তারপর মোটিফে লিকুইড দিয়েছেন। তারপর আড়ালে এসে লাইটার জ্বালিয়ে ফায়ার টেস্ট করেছেন। পরে মোটিফে আগুন দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। যে গেট দিয়ে ঢুকেছিলেন, সে গেট দিয়েই বেরিয়ে গেছেন। পরে ওই ব্যক্তি ছবিরহাট দিয়ে চলে যান।

চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় গতকাল ভোরের দিকে একজন ব্যক্তি এই প্রতিকৃতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে তার পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ভোরের দিকে একজন ব্যক্তি এই প্রতিকৃতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে তার পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ভোর বেলায় জিন্স প্যান্ট ও কালো শার্ট পরা এক যুবক ঘটনাস্থলের প্রবেশ করে। তার মুখে মাস্ক ছিল, চেহারা বোঝা যাচ্ছিল না। তবে তার মধ্যে কোনো ধরনের চাঞ্চলতা বা উদ্বিগ্নতা দেখা যায়নি। সে খুব ধীরস্থিরভাবে প্রতিকৃতিতে প্রথমে আগুন লাগায়। প্রথমে লাগানো আগুন কিছুক্ষণ জ্বলে নিভে যায়। পরবর্তীতে আবারো আগুন লাগায় সে।

ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেছে কি না সে কি ক্যাম্পাসের ভেতরের কেউ না বাইরের কেউ- এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এবিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তবে তার মুভমেন্ট দেখে বোঝা গেছে, এখাকিার পরিবেশ তার খুবই পরিচিত।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল জানান, ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিকে টার্গেট করে আগুন লাগানো হয়েছে। ওই আকৃতি পুরোটাই পুড়ে গেছে। একইসাথে পায়রার অবয়বটাও পুড়ে গেছে। আনুমানিক ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে আগুন লাগানো হয়েছে।

চারুকলার এক শিক্ষার্থী বলেন, এটি নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছিল। আজকের মধ্যে এটির কাজ শেষ হয়ে যেত। এটা নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্র। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি কেউ ইচ্ছা করেই আগুন লাগিয়েছে। প্রশাসনের লোকজনও এর পেছনে জড়িত কি না খুঁজে বের করতে হবে। কারণ রাতে এখানে পুলিশের লোকজনও উপস্থিত ছিল।

প্রসঙ্গত, এ বছর বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বাঁশ-বেতের কারুকাজে তৈরি করা হয়েছিল দৈত্যাকৃতির ‘ফ্যাসিবাদী প্রতিকৃতি’, যার উচ্চতা ছিল প্রায় ২০ ফুট। যেখানে সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মুখাবয়বের দুপাশে ছিল শিংয়ের মতো অবয়ব। প্রতিকৃতিতে ইতোমধ্যেই প্রলেপের কাজ শেষ হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এটিই ছিল এবারের শোভাযাত্রার প্রধান মোটিফ।


এদিকে, এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। একইসঙ্গে অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি। শনিবার ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দা‌বি জানা‌নো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘১২ই এপ্রিল, ভোর ৪:৫০ এর দিকে, কে বা কারা চারুকলা অনুষদের দক্ষিণ গেটের কাছে প্যান্ডেলের ভেতরে রাখা বিভিন্ন প্রতীকী মোটিফের মধ্যে ভয়ংকর ফ্যাসিস্টের মোটিফটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছে।

Share