WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_37b_1.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SHOW FULL COLUMNS FROM `nb_postmeta`

ঢাকায় চালু হচ্ছে জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মিশন চালু হতে যাচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি মিশন চালুর জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে দুই পক্ষ। ২৮টি ধারা সংবলিত সমঝোতা স্মারকটি সই করেছেন বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর গতকাল শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষায় মিশন চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারকটি সই হয়।

সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গতকাল জানান, বাংলাদেশ গত সোমবার সমঝোতা স্মারকটি সই করে জেনেভায় পাঠায়। আর জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের দপ্তর গত বৃহস্পতিবার এতে সই করে। সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী সইয়ের পর থেকে তিন বছর মেয়াদি মিশন চালু বলে গণ্য হবে। ভবিষ্যতে এর মেয়াদ বাড়াতে হলে সময়সীমা শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে জানাতে হবে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যুক্ততা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এবং গণ-অভ্যুত্থানের নৃশংসতার বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত তথ্যানুসন্ধান পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কাজ করে চলেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেন, চলমান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে মানবাধিকারকে মূল ভিত্তি হিসেবে নিয়েছে, এই সমঝোতা স্মারক সেটারই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে আসা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে আমার দপ্তরের জন্য সহায়ক হবে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার, নাগরিক সমাজ এবং অন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি আমাদের অভিজ্ঞতা ও সহায়তা বিনিময়ে যুক্ত হতে সহায়তা করবে।’

নতুন এই মিশন মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে নানা ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে।

সমঝোতা স্মারকে যা আছে

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মিশনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। গত বছরের নভেম্বরে ফলকার টুর্ক বাংলাদেশ সফরের সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে খুব শিগগির ঢাকায় এই মিশন চালু হবে। শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ণাঙ্গ দপ্তরের পরিবর্তে মিশন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।

দুই পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের কূটনীতিকদের মতো দায়মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের তাঁদের দাপ্তরিক ক্ষমতায় সম্পাদিত সব কাজের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই দায়মুক্তির মধ্যে থাকবে গ্রেপ্তার বা আটক এবং কর্মীদের ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক জিনিসপত্র জব্দ থেকে অব্যাহতি। স্থায়ী ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত কর্মকর্তারাও এই সুবিধা ভোগ করবেন। জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ শেষ হওয়ার পরও তাঁদের এ ধরনের দায়মুক্তি বলবৎ থাকবে।

আইনি প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি কিংবা দায়মুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কূটনীতিক। তাঁদের মতে, কূটনৈতিক মিশনের পাশাপাশি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত কূটনীতিকদের দায়মুক্তির বিধান সংগত। কিন্তু জাতিসংঘে তাঁদের কাজ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় নাগরিকদের দায়মুক্তির বিষয়টি অতীতে কখনো ঘটেনি। তাই চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও এই দায়মুক্তি বলবৎ থাকার বিধান কেন রাখা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ১৬টি দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের এমন মিশন রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন কূটনীতিক এই মিশন চালুর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কূটনীতিকদের মতে, এখন যে দেশগুলোতে জাতিসংঘের এ ধরনের মিশন আছে, বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ওই তালিকায় যুক্ত হওয়ার মতো নয়। সবচেয়ে বড় কথা, শেষ পর্যন্ত মিশনের কাজের পরিধি আর প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বিশেষ করে শুরুতে এক বছর মেয়াদি কারিগরি মিশনের প্রস্তাব দেয়। পরে তারা দর-কষাকষি করে তা তিন বছরে নিয়েছে। ফলে এই মিশনের কাজের ধারা অবারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মানবাধিকারের নানা ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা অতীতে ছিল, এখনো আছে। জাতিসংঘের মিশনটি তিন বছর মেয়াদে আমাদের সমস্যাগুলো দূর করে সক্ষমতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। শেষ পর্যন্ত সরকার কীভাবে এই মিশনকে কাজে লাগাবে, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’

Share