“জামায়াতের চরিত্র জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের চরিত্রের” সঙ্গে মিলে যায়

-৩২ বিশিষ্ট নাগরিক


নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বার্থে ৩২ বিশিষ্ট নাগরিক জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের মতে, “জামায়াতের চরিত্র জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের চরিত্রের” সঙ্গে মিলে যায়।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল ছিল জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্বিচার গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, উচ্ছেদের মুখে যখন স্বাধীনতাকামী মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন; তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীরা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দলীয়ভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের অনেক নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, লুটপাটে সহযোগী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’

বিবৃতিদাতারা হলেন অধ্যাপক আজফার হোসেন, রায়হান রাইন, জি এইচ হাবীব, আ-আল মামুন, সায়মা আলম, আর রাজী, সায়েমা খাতুন, কাজল শাহনেওয়াজ, মারুফ মল্লিক, রাখাল রাহা, সৌভিক রেজা, গোলাম সরওয়ার, দেবাশীষ চক্রবর্তী, আশফাক নিপুন, মোস্তফা কামাল পলাশ, মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন, গাজী তানজিয়া, এস কে তাসনিম আফরোজ, তুহিন খান, পারভেজ আলম, চিনু কবির, ফেরদৌস আরা রুমী, বিথী ঘোষ, মোহাম্মদ রোমেল, সাঈদ বারী, মাহাবুব রাহমান, সালাহ উদ্দিন শুভ্র, অর্বাক আদিত্য, আরিফ রহমান, সোয়েব মাহমুদ, অস্ট্রিক আর্যু ও সাদিক মাহবুব ইসলাম।

জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জামায়াতে ইসলামী অখণ্ড পাকিস্তানের দাবিতে সভা-সমাবেশ করেছে, প্রচার চালিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিদাতারা বলেছেন, ‘এমনকি ২৫ মার্চ বর্বর গণহত্যার পর পাকিস্তান জান্তার সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটির নেতারা। তাদের দলের নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে রাজাকার, আলবদরসহ বিভিন্ন বাহিনীতে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ, লুণ্ঠন, গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে বলে পরিষ্কার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।’

জামায়াত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। তবে তাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামী একই নামে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার কারণে তারা কখনো ক্ষমা প্রার্থনা, অনুশোচনার প্রকাশ ঘটায়নি। উল্টো বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছে।’

জামায়াতের চরিত্র জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায় জানিয়ে বিবৃতিতে দলটির প্রতি এ ধরনের রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীর কাছে এ ধারার রাজনীতি বন্ধের দাবি জানাই। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার রাজনৈতিক দায় শিকারের আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে কয়েক লাখ মানুষের শহীদি আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রমের প্রতি অবশ্যই তাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।’

দীর্ঘ বিবৃতিতে উঠে আসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের বিচারের বিষয়টিও। বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত ছিল সেটা ঠিক। তবে তার মানে এই নয় যে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত বা এ দলের নেতা–কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিল না।’ আওয়ামী লীগ এ অপরাধকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে বলেও উল্লেখ তার যথাযথ তদন্ত এবং বিচার দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অভ্যুত্থানের পর থেকে জামায়াত এবং তার সহযোগী ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা, গণহত্যাসহ অন্যান্য অভিযোগে ঐতিহাসিকভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করতে চাইছে। পাকিস্তানি শাসকেরা তখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় যে ভাষায় কথা বলত, সেই একই বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আওয়ামী লীগের মতো “শাহবাগী” ইত্যাদি ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ফিরিয়ে আনছে।’

Share