বাংলাদেশে একটি অবাধ ও ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থান সম্পূর্ণ হবে না: তারেক রহমান

নয়াবার্তা ডেস্ক : বাংলাদেশে একটি অবাধ ও ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থান সম্পূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন। গতকাল সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির এককভাবে সরকার গঠনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, আগামী নির্বাচনে আমরা জয়ী হব। আমরা জোরালোভাবে বিশ্বাস করি যে এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থায় আমরা রয়েছি।’

দেড় যুগের বেশি সময় ধরে পরিবার নিয়ে লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমার বাংলাদেশে ফেরার সময় খুব সন্নিকটে।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, বাংলাদেশে যারাই পরবর্তী সরকার গঠন করুক, তাদেরই দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি সামাল দিতে হবে। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনমনও তাদের মোকাবিলা করতে হবে। পালিয়ে ভারতে গেছেন শেখ হাসিনা।

জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে আছে, তাই ফেব্রুয়ারির ভোটের পর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষিদ্ধ করেছে।

আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে মুহাম্মদ ইউনূস যে দাবি করেন, তার প্রতিধ্বনি করেছেন তারেক রহমান। তিনি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, বিএনপি অন্যান্য দলকে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত। এসব দলের মধ্যে গত বছর অভ্যুত্থানে সামনের কাতারে থাকা ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি নতুন দলও রয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব। তারা তরুণ, তাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে।’

সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের জন্য ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মসূচির কিছু নতুন দিক তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে অ্যামাজন, ই বে ও আলিবাবার মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘সরবরাহ কেন্দ্র’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির বাইরে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার মতো বিষয় রয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ভারতের সঙ্গে ‘সবকিছুর আগে বাংলাদেশ’ পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করবেন তিনি। ঐতিহাসিকভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন জুগিয়ে আসা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এত দিনের সম্পর্ককে ‘একপক্ষীয়’ হিসেবে বর্ণনা করে একে নতুনভাবে শুরু করার কথা বলেছেন তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, বাংলাদেশে বড় দুই রাজনৈতিক দলের তিক্ত পারিবারিক রেষারেষি রয়েছে। শেখ হাসিনা দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। ১৯৭৫ সালে একদল সেনাসদস্যের হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ শেখ মুজিব নিহত হয়েছিলেন।

তারেক রহমানের বাবা জিয়াউর রহমানও দেশের আরেকজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতাসংগ্রামে তাঁরও অবদান রয়েছে। ১৯৮১ সালে তিনিও একদল সেনাসদস্যের হাতে নিহত হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া কয়েক দশক ধরে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

৫৯ বছর বয়সী তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে নির্বাসনে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা হয়েছিল, যেগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন তিনি। তারেক রহমান অঙ্গীকার করেছেন, নতুন বিএনপি সরকার প্রতিহিংসার বৃত্ত ভেঙে দেবে। এ প্রসঙ্গে তিনি গত বছরের আগস্ট থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য দলের সাত হাজার সদস্যকে বহিষ্কার বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের আওতায় আনার কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন উল্লেখ করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, এখনো আওয়ামী লীগের জনসমর্থন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার চলার উল্লেখ করে সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, ‘যদি তারা অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে?’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরভাবে বিরোধী মত দমনের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা রয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন শত শত কোটি ডলার উদ্ধারের যে চেষ্টা চালিয়ে আসছে, সেটা অব্যাহত রাখবেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে অন্তর্বর্তী সরকারের অভিযোগ।

তবে বিএনপি সর্বশেষ যখন ক্ষমতায় ছিল, সে সময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছিল।

Share