১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার

দুই সংগঠনের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : অক্টোবর মাসে দেশে কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এ ছাড়া চলতি বছরের অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় এই সংখ্যা বেড়েছে। কারা হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ও ‘মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন’ (এমএসএফ)–এর পৃথক প্রতিবেদনে মানবাধিকার পরিস্থিতির এ চিত্র উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অধিকার। সেখানে চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১৪ মাসের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। আর গতকাল চলতি বছরের শুধু অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এমএসএফ।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এই মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।

এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরেও রাজনৈতিক সহিংসতা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক।

১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪০ জন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বতী সরকারের গত ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনা মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে—৯টি, আর গত তিন মাসে ঘটেছে ১১টি। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১ জন নিহত হয়েছেন, তার তিনটি ঘটনার জন্য পুলিশ, একটি ঘটনার জন্য সেনাসদস্য এবং সাতটি ঘটনার জন্য যৌথ বাহিনী দায়ী।

অধিকারের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, গত বছরের আগস্টের ৯ তারিখের পর ওই মাসে দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। সেপ্টেম্বরে ৯ জনের পর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ১ জন করে মারা যান। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মারা যান ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন মারা যান। মার্চ ও এপ্রিল মাসে মারা যান ১ জন করে ২ জন। এরপর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকারের সংখ্যা যথাক্রমে ৪, ৩, ৬, ৩ ও ২। এই ৪০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি—১৯ জন গুলিতে মারা গেছেন, নির্যাতনে মারা গেছেন ১৪ জন, পিটিয়ে মারা হয়েছে ৭ জনকে।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। সেপ্টেম্বেরে এ সংখ্যা ছিল ৮। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তুলে ধরে।

১৪ মাসে মব সন্ত্রাসে নিহত ১৫৩ জন

অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১৪ মাসে মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ১৫৩ জন নিহত হয়েছেন। চলতি বছরে সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের ১৮টি ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ১৭টি। গত তিন মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ৪৫।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুসারে, গত অক্টোবর মাসে মোট ৪৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। অক্টোবরে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ২৮১ জন

অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৮১ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি নিহত হন এ বছরের মার্চে—৪৪ জন, এরপর এক মাসে বেশি নিহত হন গত বছরের আগস্টের ২৩ দিনে—৩৩ জন।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের অক্টোবরে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছরের শিশু থেকে ৫০ বছর বয়সী বৃদ্ধ রয়েছেন। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

Share