ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যানের ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরের ২০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রপ্তানি না করেও ভুয়া রপ্তানি বিলের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় আজ এ পদক্ষেপ নিল দুদক। আদালতের আদেশেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা, জাল কাগজপত্র তৈরি করে জালিয়াতি, পরস্পর যোগসাজশ, প্রতারণায় সহায়তা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক বলছে, এম এ কাদের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সম্পত্তি কিনেছেন বলে তারা তথ্য পায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাচাইয়ের চিঠি দিলে বেশ কিছু লুকায়িত সম্পদের তথ্য পান। আসামিরা এ সম্পত্তি অন্য কারও নামে হস্তান্তর বা রূপান্তর করতে পারেন এমন তথ্য পেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এসব সম্পদ ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ ইমরুল কায়েশ ওই সব সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। জব্দ করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার দাসেরহাটি মৌজায় ১৬টি দলিলে ৬০৫ শতাংশ জমি। ওই সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

মামলার তথ্য:
রপ্তানি না করেও ভুয়া রপ্তানি বিলের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান মালিকদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, পরিচালক সুলতানা বেগম ও রেজিয়া বেগম, রূপালী কম্পোজিট লেদারের পরিচালক সামিয়া কাদের নদী, রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুন জাহান মীরা এবং লেসকো লিমিটেডের পরিচালক হারুণ-অর রশীদকে।

ব্যাংকারদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে জনতা ব্যাংকের তৎকালীন দুই জিএম মো. ফখরুল আলম (বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি) ও মো. জাকির হোসেন (বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি), জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রেজাউল করিম (বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি), ডিজিএম মুহাম্মদ ইকবাল, এ কে এম আসাদুজ্জামান ও কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, এজিএম মো. আতাউর রহমান সরকার ও এস এম শরীফুল ইসলাম, এসপিও মো. খায়রুল আমিন ও বাহারুল আলম, মো. মাগরেব আলী, অফিসার ইনচার্জ (এক্সপোর্ট) মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার ইনচার্জ মো. সাইদুজ্জামান, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুনকে।

এর মধ্যে চারটি মামলাতেই এম এ কাদের আসামি।

মামলার এজাহারে ক্রিসেন্ট লেদারের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ক্রিসেন্ট ট্যানারির বিরুদ্ধে ৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার ১২০ টাকা, লেসকো লিমিটেডের ৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৯ টাকা, রূপালী কম্পোজিট লেদারের ৪৫৪ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৪ টাকা এবং রিমেক্স ফুটওয়্যারের বিরুদ্ধে ৬৪৮ কোটি ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এই জালিয়াতিকে দুদক বলেছে, জনতা ব্যাংকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ ডাকাতি। এ ক্ষেত্রে দুদকের অনুসন্ধান বলছে, রপ্তানি বিল কেনার ক্ষেত্রে প্রথম লেনদেনের আগে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়া বিক্রয় চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া, তিন মাস অন্তর ক্রেতার ক্রেডিট রিপোর্ট সংগ্রহ করে তা সন্তোষজনক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা, রপ্তানি বিল নিশ্চিত করা, রপ্তানি বিল নির্ধারিত সময়ে প্রত্যাবসিত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া, কোনো বিল অপ্রত্যাবসিত থাকা অবস্থায় নতুন বিল না কেনার মতো শর্তও প্রধান কার্যালয় কর্তৃক আরোপ করা হয়। কিন্তু জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় এসব নির্দেশনা পালন করা হয়নি।

গ্রাহকদের অবৈধ সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার তৎকালীন কর্মরত কর্মকর্তারা অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা নিজেরা লাভবান হয়ে এবং গ্রাহকদের লাভবান করার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রাহকেরা অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া রপ্তানি চুক্তি ব্যাংকে দাখিল করে মালামাল রপ্তানি না করেও তার বিপরীতে জনতা ব্যাংক থেকে ওই পরিমাণ টাকা নগদে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি এই ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। মামলার পরপরই ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গ্রেপ্তার করে সংস্থাটি। তখন থেকেই কারাগারে আছেন এম এ কাদের। তিনটি মামলায় ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। আসামি করা হয় ১৭ জনকে।

Share