ফের ভাঙছে মেননের পার্টি, দল ছাড়লেন বিমল বিশ্বাস

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি গত নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি’—এই বক্তব্য দিয়ে চাপে থাকা রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আবারও ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আদর্শচ্যুতির অভিযোগ তুলে দলটির পলিটব্যুরোর প্রবীণ সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস দল ছেড়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিমল বিশ্বাস দলে ভাঙনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘আমার সোজা কথা, যে রাজনীতি উনারা করছেন, সমস্ত ঘটনার প্রতিফলনের অংশ হিসেবেই আমার এই পদত্যাগ। আদর্শিক রাজনীতি, সাংগঠনিক সমস্ত ক্ষেত্রেই আমার সঙ্গে মৌলিক যে তফাত, সে তফাতের কারণেই আমি অব্যাহতিপত্র পাঠিয়েছি। এখন দেখা যাক সামনে কী হয়।’ বিমল বিশ্বাস ছাড়াও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ দলের কেন্দ্রের গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে লিখিতভাবে ভিন্নমতসহ অভিযোগ তুলে ধরেছেন দলটির পলিটব্যুরোর আরো দুই সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদও। একই সঙ্গে বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম পলিটব্যুরোর ১১ সদস্যের মধ্যে আরো অন্তত একাধিকজন। জানা গেছে, মেনন-বাদশাকে বাদ দিয়ে নতুন দল গঠনের লক্ষ্যে ভিন্নমত পোষণকারীরা এরই মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন।

বিমল বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন, আমি মনে করি—বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মার্কস-লেনিনের আদর্শের কথা বললেও বাস্তবে এর নীতি-কৌশল-সংগঠন এবং তাদের কর্মকাণ্ডে সেটির প্রতিফলন নেই। পার্টির নেতাদের আদর্শগত-রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বিচ্যুতির কারণে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহার করেছি।

বিমল বিশ্বাসের পদত্যাগের বিষয়ে রাশেদ খান মেনন গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘তার অভিযোগ, আমাদের পার্টি নীতি-নৈতিকতা হারিয়েছে। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কারও ভিন্নমত থাকলে সেটি জেলা কমিটিসহ দলের সকল ইউনিটের কাছে পাঠানো হয়। পরে সেটি নিয়ে দলের জাতীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় জাতীয় কংগ্রেসে। কিন্তু উনি (বিমল বিশ্বাস) তো যেভাবে চিঠি দিলেন সেটি গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। যেখানে তিনি নিজেই আমাদের বলছেন—নীতিআদর্শ থেকে সরে গেছি। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে উনি নিজেই মার্কস-লেনিনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছেন।

বিমল বিশ্বাসের অভিযোগসমূহ খণ্ডিয়ে মেনন ইত্তেফাককে আরো বলেন—আমাদের ১৪ দলে যাওয়া, সরকারের মন্ত্রিসভায় যাওয়া, আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করা সবকিছুই তো উনার (বিমল বিশ্বাসের) মতামতের ভিত্তিতেই হয়েছিল। কারণ যখন এসব সিদ্ধান্ত হয় তখন তিনিই ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিজেও একবার ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করে দুঃখজনকভাবে হেরে যান। এবারের নির্বাচনেও তিনি ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি কী আবারও ভাঙছে? এমন প্রশ্ন করা হলে মেনন বলেন, এরকম বিভিন্ন খবর তো পত্রপত্রিকায় দেখছি। আমি তো মনে করি পার্টি ভাঙার কোনো অবকাশ নেই।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি বলেন, আগামী ২৬ ও ২৭ অক্টোবর আমাদের দলের জাতীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এছাড়া আগামী ২ অক্টোবর দলের দশম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। ভিন্নমত বা অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

১৯৯২ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইডেট কমিউনিস্ট লীগ ও সাম্যবাদী দল (আলী আব্বাস)—এই তিনটি দল নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। আগামী কংগ্রেসকে সামনে রেখে পার্টি তৃতীয় দফায় ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পার্টির নেতাকর্মীরা।

Share