নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : নদীর তলদেশের কাজ শেষ হওয়ায় দ্রুত এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। প্রতি মাসে তিনটি করে স্প্যান বসানো হচ্ছে। ২২টি স্প্যান বসানোর পর সেতুর ৩ হাজার ৩০০ মিটার অংশ এখন দৃশ্যমান। বাকি ১৯টি স্প্যান চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বসানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে চীনের করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে। কারণ, প্রায় পৌনে সাত শ চীনা নাগরিক প্রকল্পের কাজ করছেন। তাঁদের বড় একটি অংশ চীনা নববর্ষ উদ্যাপন করতে নিজ দেশে বেড়াতে গেছে। ছুটি কাটিয়ে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশে ফিরলেও অনেকে চীনে আটকা পড়েছেন। কাজে যোগ দিতে চীন থেকে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদেরও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে সেতুর কাজের গতি মন্থরও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রকল্প–সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণে কাজ করছেন ৫ হাজার ৩০০ শ্রমিক। তাঁরা সবাই বাংলাদেশি। তাঁদের সঙ্গে ৬৬০ জন চীনা প্রকৌশলী ও স্টাফ রয়েছেন। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ১৩০ জন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট পদ্মার সেতুর প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন। চীনা নববর্ষ উদ্যাপন করতে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি চীনে ফিরে গেছেন প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ৩০ শতাংশ চীনা। হুবেই প্রদেশ থেকে ছুটি কাটিয়ে ৩০ জন চীনা কর্মকর্তা ও স্টাফ ফিরে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের ফিল্ড ওয়ার্কে রাখা হচ্ছে না।
পদ্মা সেতু প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত মাওয়ার জাজিরায় পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে চীন থেকে সদ্য ফিরে আসা প্রকৌশলী ও স্টাফদের। সেখানে তাঁদের ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। তাঁদের এ সময় কেবল দাপ্তরিক কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে ৬৬০ জনের মধ্যে শ দেড়েক প্রকৌশলী নিজ দেশে আটকা পড়েছেন। চীনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তাঁরা আপাতত বাংলাদেশে আসছেন না। যাঁরা বাংলাদেশে রয়েছেন, তাঁদেরও চীনে যেতে মানা করা হয়েছে। সবার জন্য মাস্ক, গ্লাভস পরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চীনা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের জন্য আগের থেকে আলাদা আবাসস্থল রয়েছে। সেখানে তাঁদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। তাঁদের যাঁরা খাবার পরিবেশন করেন, তাঁদেরও করোনাভাইরাসে ঝুঁকি এড়াতে মাস্ক ও গ্লাভস পরতে বলা হয়েছে। তাঁদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আইসিডিডিআরবির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাসে কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীন থেকে যন্ত্রাংশ আরও আসবে। আমরা পর্যবেক্ষণে করছি। তবে পদ্মা সেতুর সব কার্যক্রম এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে চলছে। দেখা যাক কী হয়।’
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অবশ্য চীনে আটকা পড়া বা ফিরে আসা প্রকৌশলী ও স্টাফদের কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
মূল সেতুর মোট ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৬টি শেষ হয়েছে। ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ এবং ২৯ নম্বর পিয়ারের কাজ এপ্রিল মাসের মধ্যে শেষ করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ। সব পিয়ার নির্মাণ সম্পন্ন হলে জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে বাকি ১৯টি স্প্যান বসানো হতে পারে। তাই এখন থেকে প্রতি মাসে তিনটি স্প্যান বসানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেলে পদ্মা সেতুর কাজের গতি কমে আসতে পারে। কারণ, সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ছয়টি স্প্যান এখনো বাংলাদেশে আসেনি। এর মধ্যে চারটি স্প্যান সাগরপথে রয়েছে। বাকি দুটি স্প্যান আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি চীন থেকে জাহাজে করে রওনা দিতে পারে। কিন্তু ওয়েল্ডিংসহ আরও কিছু কাজের জন্য কয়েকজন বাংলাদেশি চীনে অবস্থান করছেন। করোনাভাইরাসের জন্য তাঁরাও সেখানে কাজ করতে পারছেন না।