শ্রমিকেরা ভোগান্তি পেরিয়ে কারখানায় এসে আবার ফিরে গেলেন

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় ভোগান্তি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরেছিলেন কারখানার শ্রমিকেরা। এসে দেখেন বন্ধ। অনেক কারখানার সামনে নোটিশ ঝোলানা, সেখানে লেখা—আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ। ফলে আবারও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে ফিরে যেতে হয় শ্রমিকদের। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি ছুটি বাড়ানোই হলো, তাহলে কেন তাঁদের আগে জানানো হলো না। আজ রোববার নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ ছিল। তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৪০টি পোশাক কারখানাসহ জেলায় ২৭৫টি কারখানা খোলা ছিল।

করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ঘরে থাকতে। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। বন্ধ রাখা হয়েছে গণপরিবহন। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে কর্মস্থল ঢাকা ও আশপাশের পোশাক কারখানা–অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ফিরতে শুরু করেন হাজারো মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই পোশাকশ্রমিক। ফেরিতে, ট্রলারে, পিকআপে, মাইক্রোবাসে, ট্রাকে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে মানুষকে আসতে দেখা গেছে। গাড়ি না পেয়ে অনেকে দীর্ঘ পথ হেঁটেও এসেছেন। এতে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেওয়ায় রাতে মালিকপক্ষ থেকে কারখানা বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়।

শিল্প পুলিশ-৪–এর পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২ হাজার ৪৫৯টি এবং কারখানাগুলোতে মোট ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। আজ রোববার তৈরি পোশাক, নিটিং, ডাইং, সিমেন্ট, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের ২৭৫টি প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১৫টি এবং বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ২৫টি পোশাক কারখানা চালু ছিল। তিনি বলেন, যেসব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে এসেছিলেন, তাঁদের হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়েছে।

আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত রপ্তানিমুখী ইপিক কারখানার নারী শ্রমিকেরা জানান, রোববার থেকে কারখানা খোলা, তাঁদের আসতে বলা হয়েছে। কুমিল্লা থেকে বহু কষ্টে এসে দেখেন, কারখানা বন্ধ।
ইপিজেডের বিভিন্ন পোশাক কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, গ্রামের বাড়ি থেকে হাজার হাজার শ্রমিক গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বহু কষ্টে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কাজে যোগ দিতে এসেছেন। সকালে কারখানা বন্ধ থাকায় ইপিজেড ফটকের ভেতরে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। যেসব কারখানা চালু, শুধু সেসব কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে যদি কারখানা বন্ধই থাকবে, তাহলে তাঁদের ছুটি বাড়ানো হলো না কেন? আগে কেন জানিয়ে দেওয়া হলো না। করোনা–আতঙ্ক থাকলেও চাকরি হারানোর ভয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। গণপরিবহন বন্ধ, কীভাবে বাড়ি ফিরে যাবেন, তা নিয়ে এখন তাঁরা চিন্তিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চবটী বিসিক শিল্পনগরীসহ ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। তবে আগে থেকে না জানানোর কারণে সকালে হাজার হাজার শ্রমিক তাঁদের কর্মস্থলে যোগ দিতে আসেন। সকাল সাড়ে সাতটায় ইপিজেডে প্রবেশের প্রথম গেটের সামনে নিরাপত্তাকর্মীরা হ্যান্ডমাইকে কারখানা বন্ধ বলে শ্রমিকদের জানিয়ে দেন।

বিকেএমইএর পরিচালক মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু কারখানা চালু রয়েছে।’
শিল্প পুলিশ-৪–এর পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন আরও জানান, যেসব কারখানা খোলা হয়েছে, সেগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অধিকাংশ বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।

Share