প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা ও লক ডাউন কার্যকরের যুদ্ধে সেনাবাহিনী

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক :’সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা,সর্বত্র আমরা দেশের তরে’ এই ব্রত নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা, ত্রাণ সহায়তা ও লকডাউন কার্যকরের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন ও নতুন করোনা ভাইরাস নিয়ে এই মানুষদের সচেতনতা তৈরি এবং সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকর করতে প্রায় ৭৫০০ জনের বেশি সেনা সদস্য মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

করোনা মোকাবেলার এই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমরা সৈনিক, আমরা সব সময় যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং সেই প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আছি। সবাইকে সহযোগিতা করবো।’

তার এই বক্তব্য কতটা সঠিক তা প্রমাণ করতে মাঠ পর্যায়ের সম্মুখ যুদ্ধে আজ সেনা সদস্যরা। ২৫ মার্চ থেকে মাঠ পর্যায়ে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। সচেতনতা তৈরি, চিকিৎসা সেবা প্রদান ও লক ডাউন কার্যকর করার পাশাপাশি দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা ও দুস্থদের জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান করছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী। দেশপ্রেম আর মানবিক বোধ থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেরা বিনামূল্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন। সেই সঙ্গে রোদ, বৃষ্টি ও ঝড় উপেক্ষা করে সড়কে সড়কে টহল দিয়ে সাধারণ মানুষকে যেমন সতর্ক করছে, তেমনি ‘সঙ্গনিরোধ’ নিশ্চিতেও তেড়েফুঁড়ে না ছুটে ইতিবাচক পদক্ষেপে জয় করেছে দেশের মানুষের হৃদয়। করোনাভাইরাস বিশ্বে মৃত্যুর মিছিলে নিত্যদিন হাজার হাজার নাম যোগ করায় দেশের প্রতিটি জেলায় প্রায় ৬০০ দলে বিভক্ত হয়ে ৭৫০০ জনেরও বেশি সেনা সদস্য নানা কায়দায় ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে সচেতন করছে। প্রয়োজন অনুসারে এই সংখ্যা আরো বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

মানুষকে সচেতন করাতে ‘আতঙ্ক না ছড়াই, সতর্ক থাকি, সাহায্য করি’ কিংবা ‘ঘন ঘন হাত ধুই করোনা থেকে নিরাপদ রই’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে জন সমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে অবস্থান করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেই সঙ্গে তাদের টহল গাড়িতেও দেখা মিলছে ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করুন’ লেখা স্টিকার।

টহলে থাকা অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা, গাড়ি থামিয়ে কথা বলা এবং নির্ধারিত পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে সড়কে বের হওয়া গাড়ির চারপাশে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেয়ার কাজ করছে সেনাবাহিনী। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করতে ব্যবহার করছেন সাধারণ নিরাপত্তা সামগ্রী।

যেখানে দেশের অধিকাংশ স্থানে ডাক্তাররা প্রাইভেট চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে সাধারণ রোগীদের জন্য ইউনিয়নের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছে সেনাবাহিনীর ভ্রাম্যমান চিকিৎসা সেবা। জাতির এমন সংকটময় মুহূর্তে নিজেদের জীবনের কথা না ভেবে, নিজেদের পরিবার-স্বজনদের মায়া পেছনে ফেলে অন্ধকারে আশার আলো জ্বালিয়েছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলায় অসহায় বিপন্ন মানুষের পাশে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রতিদিনই দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় জ্বর, ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া ও পুষ্টি হীনতায় ভোগা রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ দিচ্ছেন সেনা চিকিৎসকরা।

দেশের সকলের সহায়তায় তীব্র রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। করোনা ভাইরাসের ভয় সকলকে গৃহবন্দী করলেও দেশের সুরক্ষায় প্রান্তিক পর্যায়ে নিজেদের সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

Share