প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাস্ক এবং ল্যাব চাইলেন নারায়ণগঞ্জের চিকিৎসক

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : করোনা পরীক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পিসিআর ল্যাব ও এন-৯৫ মাস্ক চাইলেন নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শামসুদ্দোহা। তবে শিল্প-প্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত বন্দরনগরী ও জনবহুল নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোনও গবেষণাগার নেই শুনে অবাক হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নারায়ণগঞ্জের ডাক্তার শামসুদ্দোহার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি অবাক হচ্ছি, সেখানে কোনও গবেষণাগার নেই?

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শামসুদ্দোহা বলেন, যেহেতু নারায়ণগঞ্জ আক্রান্ত সংখ্যা বেশি। এটা শিল্পনগরী এবং বন্দরনগরী। প্রচুর বিদেশ ফেরত লোক নারায়ণগঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। যাদের তালিকা আমাদের হাতে পুরোপুরি নাই। সেই নিরিখে আমি অবশ্যই দাবি জানাবো একটা পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য। যেহেতু আমাদের একটা করোনা হাসপাতাল আছে। স্যাম্পলগুলো কালেক্ট করে আমাদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে এবং রিপোর্ট পেতে দুই দিন লেগে যাচ্ছে। আমার যদি পিসিআর ল্যাব থাকে, আমি সকালে স্যাম্পল কালেক্ট করে সন্ধ্যার মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাবো। এইজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাতে চাই, একটি পূর্ণাঙ্গ পিসিআর ল্যাব অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, এন-৯৫ মাস্ক আমার হাসপাতালে আমি একটাও পাইনি, অথচ আমি কিন্তু করোনা চিকিৎসায় থেমে থাকি নাই। মাক্স ছাড়াই কিন্তু খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, সুরক্ষিত এন-৯৫ মাস্ক না ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়ার কারণে তাদের হাসপাতালে ১৬ জন চিকিৎসক কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নও তোলেন।

নারায়ণগঞ্জের এই সমস্যার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জে ল্যাব না থাকা এবং এন-৯৫ মাস্ক সংকটের কথা বলেন। তিনি বলেন, এন-৯৫ মাস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এগুলোর এখন কোনও সরবরাহ নেই। তবে এর কাছাকাছি মানের মাস্ক চীন ও জাপানে তৈরি হয়। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করছি এবং আরও করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যে আরও চলে আসবে। প্রয়োজনের তুলনায় তো আমাদের সব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। কিছু দেওয়া হয়েছে, আবার দিয়ে দেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জে ল্যাব না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সচিব বলেন, আমরা এখনও চেষ্টা করছি, ওখানে ল্যাব সেট-আপ করা যায় কিনা। আগে ল্যাব সেট-আপ করে তারপর পিসিআর মেশিন আমরা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। পিসিআর মেশিন আমাদের আছে, কিন্তু, ল্যাব নেই। আমরা চেষ্টা করেছিলাম মাতুয়াইলে আমাদের যে শিশু হাসপাতাল আছে, সেটার ল্যাব ব্যবহার করা যায় কিনা। কিন্তু সেটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে আমরা আগে ল্যাব সেট-আপ করে পরে পিসিআর মেশিন দেবো। একটু সময় লাগবে। আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লে আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জে কী কোনও ইনস্টিটিউশন নাই? কিচ্ছু নাই যেখানে একটা ল্যাব স্থাপন করা যায়? যে কোনও একটা রিসার্চ সেন্টার লাগবে। কিন্তু, আমি খুব অবাক হচ্ছি যে নারায়ণগঞ্জে কি কোথাও কোনও রিসার্চ সেন্টার নাই? তার মানে নারায়ণগঞ্জ সারা জীবন ঢাকার ওপর নির্ভর করে চলে আসছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে আমরা যখন চাহিদার কথাটা শুনেছি আমরা খুবই চেষ্টা করছি ওখানে একটা পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা যায় কিনা। অসুবিধাটা হচ্ছে বাংলাদেশে তো পিসিআর মেশিন অ্যাভেইলেবল না। যদি থাকতো তাহলে করা যেতো। আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব স্থাপনের চেষ্টা করবো। আমাদের যখন যে চাহিদা দেয় আমরা কিন্তু পূরণের চেষ্টা করি। এন-৯৫ মাস্কের সরবরাহ কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে, আমেরিকা বন্ধ করে দিয়েছে। সমমানের মাস্কের যদি সঙ্কট থাকে, আমরা তা পূরণ করার চেষ্টা করবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওখানে যতদ্রুত সম্ভব পরীক্ষাটা আপনারা করানোর চেষ্টা করেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে এখন তো আসা যাওয়া খুব কাছে হয়ে গেছে। যত দ্রুত এসে এটা করা যায়। দরকার হলে কিছু লোককে ভাগ করে দেন, যাতে নারায়ণগঞ্জেরটা আগে করে দেয়। নারায়ণগঞ্জের নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ল্যাব সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, বাংলাদেশের যত করোনা রোগী তার অর্ধেকই ঢাকা জেলার। গতকাল পর্যন্ত ঢাকায় আক্রান্ত ৫৪৯ জন রোগীর মধ্যে মহানগরীর ৫১৮ জন এবং উপজেলাগুলোতে ৩১ জন। ঢাকার ৫ উপজেলায় ৩১ রোগীর মধ্যে কেবল কেরানীগঞ্জের রয়েছে ২৭ জন। এটি আমাদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এ কারণে আমরা কেরানীগঞ্জের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। পাঁচটি ইউনিয়ন লকডাউন করেছি।

ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর আধিক্যের বিষয়টি তুলে ধরে সিভিল সার্জন বলেন, এই ভাইরাসটি অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল। এর গতি-প্রকৃতি এবং ফিচারস দিনকে দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আমাদের কী হতে পারে, তা আজকে বলা যাচ্ছে না। পৃথিবীর কোনও দেশের কোনও প্রেডিকশন এখানে কাজ করছে না। প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিল বয়স্ক রোগীরা বেশি আক্রান্ত হবে। যত দিন যাচ্ছে এর ডিস্ট্রিবিউশন পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা শিশু রোগী পাচ্ছি, গর্ভবতী রোগী পাচ্ছি, তরুণ রোগী পাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে করোনার চিকিৎসা যেসব হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বিশেষায়িত হাসপাতাল। এক্ষেত্রে আমরা যদি গর্ভবতী রোগী পাই, হার্ট অ্যাটাকের রোগী পাই, তাদেরও চিকিৎসা দিতে হবে। এজন্য আমার অনুরোধ থাকবে ঢাকায় যে চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে এগুলোর সবগুলোতেই সব বিভাগ চালু আছে। এর মধ্যে যে কোনও একটিকে যদি করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারিত করে দেওয়া যায়, তাহলে কেউ লেবার পেইন হার্ট অ্যাটাক বা কিডনি রোগ নিয়ে এলে আমরা করোনার পাশাপাশি ওইসব চিকিৎসা দিতে পারবো।

চিকিৎসকরাও সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা ব্যাপকহারে আক্রান্ত হচ্ছে, আইসোলেশন চলে যাচ্ছে। এজন্য কেবল চিকিৎসকদের জন্য যদি একটি আইসোলেশন সেন্টার করে দেওয়া যায়, তাহলে ভালো হতো। তাহলে কেউ যদি কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন, এই আইসোলেশন সেন্টারে থাকতে পারবেন।

চিকিৎসকের জন্য আলাদা আইসোলেশন দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাক্তার নার্সদের হোটেলে রাখা হচ্ছে না? তাদের তো হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে আবার তাদের দায়িত্বে পাঠানো হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে বসে এসব বিষয়টা একটু দেখতে হবে।

Share