নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে যশোরের আদালত প্রাঙ্গনে নামানো হলো। ছেলে মনোরম পলক বাবার হাত বাঁধা দেখে তখনও কিছু ভেবে উঠতে পারেনি। চোখ টলমল করছিলো জলে। ৫৪ দিন নিখোঁজ বাবাকে এভাবে দেখতে পাবে হয়তো সে ভাবেনি।
বাবার দিকে এগিয়ে গিয়েই জড়িয়ে ধরলো ছেলে।হ্যান্ডকাপ লাগানোর কারণে ছেলেকে তিনি প্রথমে জড়িয়েও ধরতে পারেননি। শফিকুল ইসলাম কাজল এ সময় তার ছেলেকে বলেন, ‘ভয় পাসনে বাবা, আমি কোনো অন্যায় করিনি। সত্যের জয় হবেই।’’ একথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রোববার (০৩ মে) বিকেল ৩টার দিকে যশোরের বেনাপোল আমলি আদালতে তাকে সোপর্দ করার সময় এমন হৃদয় বিধারক পরিস্থিত সৃষ্টি হয়।
রোববার দুপুরে পোর্ট থানা পুলিশ হ্যান্ডকাপ পরিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে তাকে যশোরে নিয়ে আসে। বেনাপোল থেকে এনে তাকে যশোর ডিএসবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানিয়েছেন যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের পরপরই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত অনুপ্রবেশের মামলা ছাড়াও ঢাকায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
বিকেল ৩টার দিকে যশোর ডিএসবি কার্যালয় থেকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয় ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে। এ সময় তিনি মানসিকভাবে দৃঢ় ছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে তার ছেলে মনোরম পলক তাকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় কেঁদে দেন সাংবাদিক কাজল। অশ্রুসিক্ত হয়ে শফিকুল ইসলাম কাজল তার ছেলেকে বলেন, ‘ভয় পাসনে বাবা, আমি কোনো অন্যায় করিনি।
যশোরে প্রেরণের আগে ফটোসাংবাদিক কাজলকে পোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান ও নাভারণ সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর বিজিবির করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে যশোর আদালতে পাঠানো হয়।
শনিবার রাতে বেনাপোল সীমান্তের সাদিপুরের একটি মাঠের মধ্য থেকে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে উদ্ধার করে যশোর ৪৯ বিজিবির রঘুনাথপুর ক্যাম্পের টহল দল। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাকে গভীর রাতে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।
যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে জড়িতদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে; তাতে আসামির তালিকায় শফিকুল ইসলাম কাজলের নামও রয়েছে। মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর গত ৯ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলাটি করেন।
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় দৈনিক পক্ষকাল অফিস থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী নয়ন। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক।