নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর পশ্চিমের জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বড় বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উপর এটি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আঘাত-ক্ষতি বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দুই কোটির বেশি পরিবার বিদ্যুৎহীন ছিল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় ৮৫ লাখ পরিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। আর আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় এবং বিদ্যুতের লাইন পুরোপুরি মেরামত করতে না পারায় পুনঃসংযোগ পাওয়ার পরও অনেক পরিবারে বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ৩ কোটি ৬৪ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে এবং আবাসিক খাতের অল্পকিছু পরিবারে একাধিক বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৯০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এর মানে অন্তত ৮৫ লাখ পরিবারে বিদ্যুতের লাইট জ্বলেনি। প্রতি পরিবারে চার জন সদস্য করে ধরলে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ২ হাজার ৬৮৩ মেগাওয়াটে নেমে আসে। অথচ সাম্প্রতিককালে এ সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ হাজার মেগাওয়াটের উপরে ছিল। সকাল থেকে বিদ্যুতের পুন-সংযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা ও উৎপাদনও বাড়ে। তবে দুপুর ১টা পর্যন্ত চাহিদা সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হয়নি।
আম্ফানের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। সকালে আরইবির দুই কোটি ৮৫ লাখ গ্রাহকের মধ্যে প্রায় দুই কোটির গ্রাহক বিদ্যুৎ পায়নি। ওজোপাডিকোর ১২ লাখ গ্রাহকের প্রায় সবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন জানান, এ সংস্থার আওতাধীন এলাকায় অন্তত এক হাজার ৬০০ বিদ্যুতের খুঁটি উড়ে গেছে বা উপড়ে পড়েছে। ৭২৫টি ট্রান্সফরমার বিকল। ৪০ হাজার মিটার ভেঙ্গে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ হাজার স্থানে তার ছিড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬০ শতাংশ লাইন মেরামত করা গেছে। এ সময় পর্যন্ত ৭০ লাখ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। তিনি আশা করছেন শুক্রবার নাগাদ ৯০ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনর্বহাল করা যাবে। তবে সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, রংপুর, খুলনাসহ বেশকিছু স্থানে বাঁধ এবং রাস্তাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন জানান, ঝড়ে বিদ্যুতের সবগুলো ফিডার বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি গ্রিডও বন্ধ ছিল। কিছুস্থানে ১৩২ লাইন ট্রিপ করে। কিছু স্থানে ওভার ভোল্টেজে ট্রান্সফরমার ট্রিপ করে। অসংখ্য খুঁটি ভেঙে গেছে ও বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেরামত শুরু হয়েছে। শুক্রবার নাগাদ সিংহভাগ লাইন ঠিক হয়ে যাবে। তবে কিছু স্থানে বড় গাছ উপরে পড়ে লাইন ক্ষতি হয়েছে বা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে সরবরাহ পুনর্বহালে আরেকটু বেশি সময় লাগবে।
চট্টগ্রাম বিভাগে অনেক স্থানে পিডিবির অনেক লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিংবা ওভারভোল্টেজ ঠেকাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে গ্রিড সাব স্টেশনে আগুন লাগায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন ছিল।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে (শুক্রবারের মধ্যে) বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা নিতে সবগুলো সংস্থা-কোম্পানিকে বলা হয়েছে। উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালনের মধ্যে সমন্বয় করা হচ্ছে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ও সহায়তা করবে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের শতভাগ পুনবর্হাল করা হবে।