বিচারবহির্ভূত হত্যা আর একটিও চান না অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : “পুলিশের ভেতর রং কনফিডেন্স গ্রো করেছে। বিকজ পুলিশের বিচার হয়নি। পুলিশ যে একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেটা কেউ নজরে আনেনি। যদি সুপারভিশন ঠিক থাকতো, তাহলে পুলিশ এত ঔদ্ধত্য হতে পারত না।” কথাগুলো বল্লেন, রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)। রাওয়ার চেয়ারম্যান খন্দকার নুরুল আফসার।

আজ টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের উত্তরার বাসায় যান রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। এ সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তাঁর মা নাসিমা আক্তার।

রাওয়ার চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার নুরুল আফসার বলেছেন, বাংলাদেশে আর একটিও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখতে চায় না রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)। ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করতে হবে।

টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের উত্তরার বাসায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে নিহত সিনহার উত্তরার বাসায় গিয়ে তাঁর মা নাসিমা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন রাওয়ার নেতারা।

সিনহা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যেটা দেখছি, সরকারের যে মনোভাব, প্রশাসনের মনোভাব, তাতে সিনহার মা-বোন খুশি, রাওয়াও খুশি। তবে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনকে প্রত্যাহার করতে হবে।’

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে মন্তব্য করে খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, ‘আমরা চাই, দেশে যেন এমন আর একটিও হত্যাকাণ্ড না হয়। সিনহা হত্যাকাণ্ডে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন, তাদের অস্ত্র জব্দ করা হোক। সিনহা হত্যার বিচারটা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে সিনহা কিংবা তাঁর মতো যারা ভুক্তভোগী, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তারও বলেছেন, ‘এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হোক। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’

গত ৩১ জুলাই রাত ৯টা ২৫ মিনিটে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে মেজর (অব.) সিনহাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ওই মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাতজন গ্রেপ্তার হন।

সিনহার মা নাসিমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের দিন রাত সাড়ে ১১ টার পর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার তাঁকে ফোন দিয়ে নানান ধরনের তথ্য জেনে নেন। কিন্তু সিনহাকে যে খুন করা হয়েছে সেই তথ্য জানাননি। পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানার তিনজন পুলিশও তাঁর বাসায় এসে নানা ধরনের তথ্য জেনে যান। কিন্তু সিনহাকে যে পুলিশ খুন করেছে, তা জানাননি। বরং সিনহা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল কি না সে ব্যাপারে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

কেমন ছিলেন সিনহা, সে সম্পর্কে মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘সাধারণ জনগণসহ সবাইকে সিনহা আপন ভাবত। সবাইকে আপন করে দেখত, প্রত্যেকটা মানুষকে। কখনো সে নিজের পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করে সুবিধা নিতেন না। সে তার ব্যবহার দিয়ে মানুষের মন জয় করত। আমি তাকে সেই স্বাধীনতাটুকু দিয়েছিলাম। সিনহা বলত, একটা মানুষের যে মানবিক গুণাবলি থাকে, সেই মানবিক গুণাবলি দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে, এর চেয়ে কি বড় হতে পারে।’

সিনহা কাজপাগল মানুষ ছিলেন জানিয়ে মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘মা পাওয়ার আজ আছে, কাল নেই। মানুষের হৃদয়ের মধ্যে থাকব, মানুষের জন্য কাজ করব। সিনহা কথায় বিশ্বাসী ছিলেন না, কাজে বিশ্বাসী ছিলেন। সিনহা বিশ্ব ভ্রমণ করবে। প্রত্যেকটা কাজের সে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিকল্পনা করত। সে ওটা জানাতে চাইত না, একটা সারপ্রাইজ দেবে। একটা সুন্দর কিছু উপহার দেবে দেশকে। নেক্সট জেনারেশনের কথা সে অনেক ভাবত। সিনহার প্রত্যেকটা কর্মে আমার সমর্থন ছিল। ভেতরে-ভেতরে আমি গর্ববোধ করতাম।’

সিনহার মা জানান, তাঁর ছেলে ডকুমেন্টারি তৈরির কাজের জন্য কক্সবাজার যায়। বলত, একটা সারপ্রাইজ দেবে সবাইকে। সে ক্রিয়েটিভ কাজ করত।

সিনহা হত্যাকাণ্ডে বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে সব সময় বলত, বি পজিটিভ। আমিও বি পজিটিভের কথা বলব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেনা বাহিনীর প্রধান, নৌ-বাহিনীর প্রধান আমাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রত্যেক মায়ের প্রতিনিধি হিসেবে বলব, এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে যেন আর না হয়। এ ব্যাপারে প্রত্যেকে যেন সচেতন থাকে।’

আর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, আমি গর্ববোধ করি, সিনহার মতো আমার একটা ভাই ছিল। আমি তাঁকে বলতাম, তুমি হলে মানুষের হৃদয়ের রাজপুত্র। সিনহা সেটা প্রমাণ করেছে নিজের মানবিক গুণাবলি দিয়ে। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের একটাই আপিল, দ্রুত তদন্ত করে যেন সঠিক বিচারের ব্যবস্থা করা হয়।’

Share